Home / অন্যান্য / স্বপ্ন ছিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার, হলেন মেডিকেলে দেশসেরা

স্বপ্ন ছিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার, হলেন মেডিকেলে দেশসেরা

সুমাইয়া মোসলেম মীম (১৮)। ছোটবেলা থেকেই ভালো ছাত্রী। পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। এসএসসি ও এইচএসসিতেও বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পেয়েছেন জিপিএ-৫। স্বপ্ন ছিল ইঞ্জিনিয়ার হবেন। তবে মায়ের স্বপ্ন ছিল ভিন্ন। মায়ের ইচ্ছা তার মেয়ে একজন ভালো চিকিৎসক হবেন।

মায়ের স্বপ্নকে প্রাধান্য দিয়ে তিন মাস অক্লান্ত পরিশ্রম করে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন মীম। নিজের প্রচেষ্টা, মা-বাবার দোয়া ও শিক্ষকদের সহযোগিতায় মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় দেশসেরা হয়েছেন তিনি।

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার কলেজশিক্ষক মোসলেম উদ্দীনের মেয়ে সুমাইয়া মোসলেম মীম। মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) প্রকাশিত সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন তিনি। খুলনা মেডিকেল কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা দিয়েছিলেন মীম। লিখিত পরীক্ষায় ৯২ দশমিক ৫ নম্বর পেয়েছেন। সবমিলিয়ে তার মোট প্রাপ্ত নম্বর ২৯২ দশমিক ৫।

সুমাইয়া মোসলেম মীম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ তায়ালার রহমতে আজ আমার এই অবস্থান। অবশ্য এত বেশি প্রত্যাশা আমার ছিল না। তারপরও আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন। এই সফলতার পেছনে আমার আব্বু-আম্মুর অবদান সবচেয়ে বেশি।

তিনি বলেন, আমাদের গ্রামের বাড়ি ডুমুরিয়া। খুলনা শহরে এসে থাকি। আব্বু-আম্মু দুজনই চাকরি করেন। এখান থেকে গিয়ে কাজ করতে হয়েছে। আমার জন্য দুইটা বছর প্রচুর কষ্ট করতে হয়েছে তাদের। বিশেষ করে আমার আম্মুর কথা বলব। তাকে অনেক কষ্ট করে যশোরের কেশবপুরে যেতে হয় চাকরি করতে। আমার জন্য আম্মু হাসিমুখে সব কষ্ট সহ্য করেছেন। যাতে আমি একটু ভালো করি। আজ তাদের মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছি। এটা আমার কাছে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।

নিজের স্বপ্নের বিষয়ে মীম বলেন, ‘ডাক্তার হবো’- এমন কোনো আশা আমার ছিল না। শুধু আম্মুর জন্য ডাক্তারি পড়তে যাচ্ছি। যেহেতু এত ভালোভাবে এই জায়গায় আসতে পেরেছি, সেটা অনেক বেশি ভালো লাগার একটা বিষয়। আমার সাফল্যের জন্য আম্মুর অবদান সবচেয়ে বেশি। পরীক্ষার পর থেকে এখন পর্যন্ত টেনশনে তার মুখে আমি হাসি দেখিনি। যেহেতু আমি পরীক্ষা দিয়ে বলেছিলাম, আমার পরীক্ষা ভালো হয়নি।

মীম বলেন, ডাক্তার সিয়াম ভাইয়া আমাকে লেখাপড়ার বিষয়ে গাইড করেছেন। ছোটবেলা থেকে শিক্ষকদের অবদান অনেক বেশি ছিল। শিক্ষকরা আমাকে অনেক বেশি সাপোর্ট করেছেন। সকলের দোয়ায় আজকে আমার এই অবস্থান। পঞ্চম শ্রেণিতে আমার প্রিয় শিক্ষক ছিলেন সামছুর রহমান। তিনি ভাবতেন আমি ভালো কিছু করতে পারব, সাহস জোগাতেন। তার কথা ও মর্যাদা রাখতে পেরেছি, সেটা আমার ভালো লাগার একটা জায়গা।

তিনি বলেন, আমি ডুমুরিয়ার মেয়ে। ডুমুরিয়া গলফ গার্লস মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং এম এম সিটি কলেজে আমি পড়ালেখা করেছি। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছি।

মেডিকেল ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে মীম বলেন, বুঝে পড়তে হবে। যেটাই পড়ি, কনসেপ্টটা ক্লিয়ার করে পড়তে হবে। যেটা আমি করেছি। মেডিকেলে সবাই ভাবে যে, মুখস্থ করতে হবে। কিন্তু মুখস্থ করার চেয়ে জরুরি বুঝে পড়া। আজ মুখস্থ করছি, কাল আর মনে থাকছে না। এমন হতে পারে। কিন্তু বুঝে পড়লে সফলতা পাওয়া যায়। আমার অনুজদের প্রতি পরামর্শ থাকবে তোমরা যেটুকু পড়বা বুঝে পড়বা, কেন পড়ছো, কী পড়ছো সেটা বুঝতে হবে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিষয়ে তিনি বলেন, একজন ভালো ডাক্তার হওয়া, সবার আগে ভালো মানুষ হওয়া। যাতে মানুষের সেবা করতে পারি। যেহেতু সেবামূলক পেশায় যাচ্ছি, সেই সেবাটা যেন করতে পারি ভালোভাবে।

মীম বলেন, আমাদের দেশে একটা ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে ‘ডাক্তাররা কসাই’। এই ধারণা যেন পাল্টাতে পারি সেই চেষ্টা করব।

তিনি বলেন, আমার আম্মুর ইচ্ছা ছিল দুই বোনের মধ্যে একজন ডাক্তার হবে। কিন্তু আপুর ক্ষেত্রে সেটা হয়নি। ফলে এখন তার ইচ্ছা, আমাকে ডাক্তার বানাতেই হবে। তার স্বপ্ন পূরণে আমি ডাক্তারি পেশাকে স্বপ্ন হিসেবে নেব ইনশাআল্লাহ।

মীমের বাবা মোসলেম উদ্দীন সরদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আল্লাহর অশেষ রহমতে গ্রাম থেকে উঠে আসা আমার মেয়ে আজ দেশসেরা হয়েছে। ডুমুরিয়ায় আমার গ্রাম। সেখান থেকে নগরীতে এসে কোচিং করিয়েছি। ডিএমসি স্কলার কোচিংয়ে ডাক্তার সিয়ামের তত্ত্বাবধানে সে লেখাপড়া করে। এছাড়া দু-একটি কোচিংয়ে সে পরীক্ষা দিয়েছে। একমাত্র ডিএমসি স্কলার কোচিংয়ের শিক্ষকদের প্রচেষ্টায় ভালো ফলাফল করেছে সে।

তিনি বলেন, গ্রাম থেকে এসে শহরে থেকে মেয়ে এতোসুন্দর রেজাল্ট করেছে, এটা আল্লাহর অশেষ রহমত। আমি জানতাম ভালো করবে, তবে এত ভালো ফলাফল করবে সেই প্রত্যাশা করিনি। এই সফলতার পেছনে তার মায়ের অবদান সবচেয়ে বেশি।

মীমের মা খাদেজা খাতুন বলেন, আমার স্বপ্ন ছিল দুই মেয়ের একজন ডাক্তার হবে। বড় মেয়ে হতে পারেনি। ছোট মেয়ে আজ পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে। আমার স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। এখন আমি অনেক খুশি।

তিনি আরও বলেন, কয়েকদিন ধরে রাতে ঘুমাতে পারিনি। আল্লাহর কাছে দোয়া করেছি যেন মেয়ে ভালো ফলাফল করে। আল্লাহ আমার ডাক শুনেছেন। আমার মেয়ে যেন অনেক ভালো মানুষ হতে পারে, সমাজের গরিব-দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে।

ডিএমসি স্কলার কোচিংয়ের পরিচালক ডা. সিয়াম বলেন, একজন শিক্ষার্থী যদি ভালো ফলাফল করে সেটি আমাদের গর্বের বিষয়। আর যদি সেটা দেশে প্রথম হয়, তাহলে তো আরও গর্বের। এর আগেও ২০১৮ সালে আমাদের এক শিক্ষার্থী প্রথম হয়েছিল। ২০১৭ সালে লিখিত পরীক্ষায় আমাদের প্রথম হয়েছিল। গত সাত বছরে আমাদের তিন শিক্ষার্থী প্রথম হয়েছে। এটা আমাদের কাছে গর্বের বিষয়।

তিনি বলেন, একজন শিক্ষার্থী যখন ভালো করে, তখন সবাই কৃতিত্ব নিতে চায়। মীম শুধু ডিএমসি স্কলারের ক্লাস করেছে। আমার কাছে ব্যাচ করেছে। বাসায় তিন মাস এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক পড়িয়েছে। মীম সাত মাস আমাদের কাছে পড়েছে। ডিএমসি স্কলার ছাড়া আর কোথাও মীম ক্লাস করেনি, এটি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারব। এটা মীম ও তার গর্বিত বাবা-মাও বলবেন।

Check Also

আপনার বাচ্চা বুদ্ধিমান ও মেধাবী হবে এই সহজ ১০টি উপায়ে

সহজ ও সাধারন এই ১০ উপায় সন্তান বুদ্ধিমান ও মেধাবী হবে, ঘরের পরিবেশ আপনার সন্তানকে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *