Home / মিডিয়া নিউজ / প্রবীর মিত্রের দিন কাটছে অসুস্থতা ও একাকীত্বে

প্রবীর মিত্রের দিন কাটছে অসুস্থতা ও একাকীত্বে

দেশের বর্ষীয়ান চলচ্চিত্র অভিনেতা প্রবীর মিত্র। ৬০’র দশক থেকে তিনি অভিনয় করছেন। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে প্রবীর মিত্র ‘নায়ক’ হিসেবে কয়েকটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এরপর ‘চরিত্রাভিনেতা’ হিসেবে কাজ করেও তিনি পেয়েছেন দর্শকপ্রিয়তা।

তৎকালীন তিতাস একটি নদীর নাম, তীর ভাঙা ঢেউ, অভাগী বড় ভালো লোক ছিল, জন্ম থেকে জ্বলছি, নবাব সিরাজউদ্দৌলা থেকে শুরু করে আজকের আকাশ ছোঁয়া ভালবাসা, ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায়না, দেবদাস, বলো না তুমি আমার, দেহরক্ষী, সুইটহার্ট, সর্বশেষ প্রেমী ও প্রেমীসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের অভিনেতা প্রবীর মিত্র।

তবে বছরখানেকের বেশি সময় ধরে শক্তিমান এই অভিনেতাকে দেখা যাচ্ছে না কোথাও। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রবীর মিত্র ভালো নেই। সিনেমায় কাজ করেন না, রয়েছেন আড়ালে। শারীরিক অসুস্থতা ও একাকীত্ব সঙ্গে নিয়ে রাজধানীর সেগুনবাগিচার বাসায় চার দেয়ালের মাঝে দিন কাটছে ৭৭ বছর বয়সী এই অভিনেতার। জানা যায়, অস্টিওপরোসিসে আক্রান্ত হয়েছেন প্রবীর মিত্র। এই রোগের ফলে তার হাড়ে ক্ষয় ধরেছে। যন্ত্রণাদায়ক এই রোগের জন্য ঠিকমত হাঁটতে পারেন না তিনি। মাঝেমধ্যে প্রচণ্ড ব্যথায় ভোগেন, আবার কদিন ভালো থাকেন।

শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) সকালে চ্যানেল আই অনলাইনকে প্রবীর মিত্র বলেন, গত নভেম্বরে স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলাম। আবার ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। কিন্তু বাইরে বের হতে ইচ্ছে হয় না। তাই যাওয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, এ অবস্থায় আমার সিনেমায় কাজ করার মত পরিস্থিতি নেই। আদৌ আর কাজ করতে পারব কিনা জানিনা। দিনরাত বাসায় থাকি। এ ঘর থেকে ও ঘরে যাই লাঠিতে ভর করে।

সারাদিন বাসায় বই, পত্রপত্রিকা আর টেলিভিশন দেখেই দিন কাটে প্রবীর মিত্রের। আগে সময় পেলে বিকেলে ছুটে যেতেন কাকরাইল ফিল্ম পাড়ায়। চা খেতেন, আড্ডা মারতেন। এখন সেটাও পারেন না। যে চলচ্চিত্রের জন্য জীবনের এক তৃতীয়াংশ সময় ব্যয় করেছেন, সেখানকার মানুষজন দু-একজন ছাড়া খোঁজখবরও নেন না বলে জানালেন প্রবীর মিত্র।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার প্রাপ্ত এই অভিনেতার ভাষায়, ১৫ বছর হলো আমার স্ত্রী বেঁচে নেই। তার না থাকা এখন অনুভব করছি। কেমন জানি হয়ে গেছি। আজ আমি বড় একা। কাজ করতে শরীর সায় দেয় না বলে মানুষ খোঁজ নেয়না । মাঝেমধ্যে ভাবি, কাদের জন্য এত কাজ করেছি! শারীরিক সুস্থতার জন্য সবার কাছে আশির্বাদ চাওয়া ছাড়া আমার কিছু বলার নেই।

প্রবীর মিত্রের অসুস্থতার খবর পেয়ে তাকে দেখতে গিয়েছিলেন চিত্রপরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান মানিক। এই নির্মাতা জানিয়েছেন, তিনি সারাদিন বাসায় থাকেন, একাকীত্ব ফিল করেন। আমি গিয়েছিলাম, দেখে খুব খুশি হয়েছিলেন। তার এক ছেলে রয়েছে, সে চাকরী করে। সারাদিন বাইরে থাকে, রাতে বাসায় ফেরে। ওনার স্ত্রী ও মেয়ে মারা গেছেন অনেক আগে।

নির্মাতা মানিক বলেন, তাকে (প্রবীর মিত্র) দেখে মনে হয়নি তিনি আর্থিক কষ্টে ভুগছেন। আমি তাকে ডাক্তারের কাছে যেতে বললাম, তিনি জানালেন কোনো কাজ হচ্ছে না। আর তিনি বাসা থেকে বেরই হতে চাননা। আমি তাকে হোমিওপ্যাথি খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। বলেছি, আমি ঔষধ নিয়ে আসবো।

স্কুলজীবনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে অভিনয় করেছিলেন প্রবীর মিত্র। পরবর্তীতে পরিচালক এইচ আকবরের হাত ধরে ‘জলছবি’ নামে একটি চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়েছে বড়পর্দায় তার অভিষেক হয়। মূলত এ ছবিতে কাজের ব্যাপারে তার বন্ধু এটিএম শামসুজ্জামানই তাকে সহযোগিতা করেছিলেন। ১৯৪০ সালে পুরনো ঢাকায় জন্মগ্রহণকারী প্রবীর মিত্র স্কুলজীবন থেকেই নাট্যচর্চার সঙ্গে যুক্ত হন।

Check Also

আমি নায়িকা ছিলাম, নায়িকা হয়েই মরবো: নূতন

ঢাকাই সিনেমার সোনালি যুগের জনপ্রিয় অভিনেত্রী নূতন। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে মূল থেকে পার্শ্ব চরিত্র; তিন শতাধিক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *