চিত্রনায়ক রিয়াজ। সালমান শাহ পরবর্তী চলচ্চিত্রে যে কজন রাজত্ব করেছেন তার মধ্যে অন্যতম তিনি। তিন বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া এই অভিনয়শিল্পী বর্তমানে বড় পর্দা থেকে কিছুটা দূরে থাকলেও ছোট পর্দায় নিয়মিত অভিনয় করছেন। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে সহসভাপতি পদে নির্বাচিত হয়ে শিল্পীদের পক্ষে দাবী আদায়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন তিনি। চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে অভিনয় ও নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন রিয়াজ।
শব্দ অনেক। কোথায় আছেন?
রাস্তায়, বাসা থেকে আমার রেষ্টুরেন্টে যাচ্ছি।
ব্যবসাতেই এখন বেশি সময় দিচ্ছেন?
ব্যবসাতে অনেকটা সময় দিচ্ছি। কিন্তু এর মধ্যে অভিনয়ও চালিয়ে যাচ্ছি।
সিনেমায় অনিয়মিত হয়ে পড়েছেন?
সিনেমার অবস্থা ভালো নয় এখন। প্রযোজকরা টাকা লগ্নি করে তা ফেরত পাচ্ছে না। এজন্য পুরোনো প্রযোজকরা অনেকেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। সৌখিন প্রযোজকরাই এখন বেশি কাজ করছেন। একটা দুটো সিনেমা বানান, তারপর চলে যান। তাদের সিনেমায় আমাদের স্থান কোথায়। পছন্দ মতো নায়ক-নায়িকা নিয়ে সিনেমা বানান, তারপর লাভ হউক আর না হউক বিদায় নেন ইন্ডাষ্ট্রি থেকে।
ভারতের কালিম্পংয়ে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে শানারেই দেবী শানুর সেলফিতে রিয়াজ
এ অবস্থার জন্য দায়ী কে?
অবশ্যই আমরা। চলচ্চিত্রে একটা দুষ্টচক্র আছে। তারা সিনেমাকে স্বাভাবিক গতিতে এগোতে দিচ্ছে না। বিশেষ করে হলে সিনেমা প্রদর্শন করে প্রযোজক লাভ পাচ্ছে না বুকিং এজেন্টদের কারণে। নানা টালবাহানা করে সামান্য টাকা প্রযোজকের হাতে গছিয়ে দিচ্ছে এসব বুকিং এজেন্ট ও হল মালিকরা। যার জন্য এখন আসল প্রযোজকের সংখ্যা খুব কম। তার মধ্যে গত কয়েক বছরে যুক্ত হয়েছে যৌথ প্রযোজনার নামে যৌথ প্রতারণার মতো বিষয় ও সাফটা চুক্তির মাধ্যমে সিনেমা বিনিময়।
যৌথ প্রযোজনার নামে যৌথ প্রতারণা?
যৌথ প্রযোজনার নামে যে ছবিগুলো হলে চলছে সেগুলোতে চলছে শুভঙ্করের ফাঁকি। এসব সিনেমায় ভারত থেকে বেশির ভাগ শিল্পী ও কলাকুশলী থাকে। তারপর বিভিন্ন পক্ষকে ম্যানেজ করে আমাদের কিছু দালাল প্রযোজক যাদের উদ্দেশ্য কেবল মুনাফা, দেশপ্রেম তাদের কাছে কোনো বিষয় নয়। তারা এসব সিনেমা দেশের বেশির ভাগ হলে চালাচ্ছেন। এমনিতেই আমাদের চলচ্চিত্রের নাজুক অবস্থা, তারমধ্যে এ অপতৎপরতার কারণে ইন্ডাষ্ট্রি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
যৌথ প্রযোজনার ছবি বন্ধ করার কথা বলছেন?
আমি এটা বলিনি। আমি বলেছি যৌথ প্রযোজনার নীতিমালা মেনে সিনেমা নির্মাণ করতে হবে, নয়তো নয়। কিন্তু দুঃথের বিষয় যে আমাদের দেশের প্রযোজনা সংস্থা জাজ মাল্টিমিডিয়া একের পর এক প্রতারণা করে চলেছে যৌথ প্রযোজনার নামে। সর্বশেষ করেছে ‘নবাব’ ও ‘বস টু’ ছবি দুটির ক্ষেত্রে। এ দুটি ছবিতে নীতিমালা মানা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে যখন আমরা আন্দোলন শুরু করেছি, তখন তারা যে কোনো মূল্যে এ দুটি ছবি হলে চালানোর জন্য উঠে পড়ে লাগে। এ ব্যাপারে তারা সরকারকেও বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।
চিত্রনায়ক রিয়াজ
ঈদে ছোটপর্দায় কী কী কাজ করেছেন?
কয়েকটি কাজই করেছি। সম্প্রতি দুটি নাটকের শুটিং করে এলাম ভারতের কালিম্পং থেকে। দুটি নাটকেই আমার বিপরীতে অভিনয় করেছেন শানারেই দেবী শানু। নাটক দুটির নাম ‘মেঘের বাড়ি’ আর ‘একদিন অসুখে’। দুটি নাটকই নির্মাণ করছেন সতীর্থ রহমান রুবেল। এ দুটি নাটক ঈদে দুটি টিভি চ্যানেলে প্রচার হওয়ার কথা। এস এ হক অলীকের রচনা ও নির্দেশনায় একটি টেলিফিল্মটির তাজ করলাম। নাম ‘শুকনো ফুল ও সতেজ প্রেমের গল্প’। এতে আমার বিরপেিত অভিনয় করেছে ভাবনা। আসছে ঈদে বাংলাভিশনে প্রচার হবে ‘শুকনো ফুল ও সতেজ প্রেমের গল্প’। মিনহাজ অভির ছয় পর্বের ধারাবাহিক নাটক ‘মায়া’র কাজ। এছাড়া চয়নিকা চৌধুরীর একটি নাটকে অভিনয় করেছি।
আপনার সময়সাময়িক অনেকেই তো নির্মাতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন, আপনি কী ভাবছেন?
অন্যদের কথা বলতে পারব না। তবে এখন পর্যন্ত আমার নির্মাতা হওয়ার ইচ্ছে নেই। অভিনয় নিয়ে আছি, এই বেশ আছি।
চলচ্চিত্র এবং নাটক- কোন মাধ্যমে বেশি স্বাচ্ছন্দ এখন?
একজন অভিনেতা কাজের স্বাচ্ছন্দ্য সব ক্ষেত্রেই থাকে। আমিও তার বাহিরের কেউ নই। যেহেতু একটু বিচার-বিবেচনা করে কাজ করি তাই স্বাচ্ছন্দ্য সব জায়গায়ই খুঁজে পাই।
ছবি: সংগৃহীত