সময়ের আলোচিত ও জনপ্রিয় নায়িকা মাহিয়া মাহি ৩০ জানুয়ারি ফেসবুকে ঘোষণা করেছেন- “অগ্নি-টু আমার শেষ ছবি। আমি আমেরিকা যাচ্ছি। জানি না, সবার সঙ্গে আবার কবে দেখা হবে? সবাইকে অনেক মিস করব।” খবরটা রীতিমতো আঁতকে ওঠার মতোই। এ সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী মাহিয়া মাহির চলচ্চিত্র ছাড়ার ঘোষণায় তোলপাড় শুরু হয়েছে চলচ্চিত্র অঙ্গনে। সত্যিই কি চলচ্চিত্র থেকে বিদায় নিচ্ছেন তিনি? কিন্তু কী কারণে তার এ সিদ্ধান্ত? তার ভক্তসহ অনেকেই আশা করছেন, অভিমান ভাঙ্গবে তার। তিনি আবারও ফিরে আসবেন। আবারও নতুন ছবিতে, নতুন চরিত্রের হয়ে মাহি হাসবেন, কাঁদবেন। আনন্দ দেবেন সবাইকে। এটাই সবার প্রত্যাশা…
৩১ জানুয়ারি নিউইয়র্কে পৌঁছে একই কথা জানিয়েছেন এই অভিনেত্রী। ফেসবুকে কথা বলেছেন তিনি। সেদিনের ফেসবুকের আলাপচারিতা ও নিউইয়র্ক যাওয়ার কিছুদিন আগের কথোপকথন নিয়ে এই সাক্ষাৎকারটি গ্রন্থনা করা হয়েছে।
সাক্ষাৎকার গ্রহণে: আবু কাউসার খোকন
সাক্ষাৎকার: সত্যি কি অভিনয় ছেড়ে দিচ্ছেন?
মাহিয়া মাহি: নতুন আর কোনো ছবিতে অভিনয় করব না। তাই ‘অগ্নি ২’ হতে যাচ্ছে আমার শেষ ছবি। একেবারে চলে এসেছি। ম্যানহাটনের একটি হোটেলে উঠেছি আপাতত। চলচ্চিত্রে আর কাজ করার ইচ্ছে নেই। ভালো করে পড়াশোনাটা চালিয়ে যাওয়াই আমার মূল লক্ষ্য।
৬ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পেয়েছে আপনার অভিনীত ‘বিগ ব্রাদার’ চলচ্চিত্রটি। এ চলচ্চিত্রটির সম্পর্কে বলুন?
‘অগ্নি’র পর সাফি উদ্দিন সাফির ‘বিগ ব্রাদার’ ছবিতেও আমাকে নারী প্রধান চরিত্রে দেখছেন দর্শক। কিন্তু এমন নারী প্রধান চলচ্চিত্র ঢালিউডে খুব কমই নির্মাণ হয়। চলচ্চিত্র হবে নায়ক প্রধানÑ এটা তো দীর্ঘদিনের একটা ট্রেন্ড। সেখান থেকে সম্প্রতি কিছুটা সরে আসছেন নির্মাতারা। ‘অগ্নি’, ‘বিগব্রাদার’-এর মতো আরও অনেক ছবি হবে বলে আশা করছি। মানুষের রুচির পরিবর্তন হচ্ছে। তাই আস্তে আস্তে আগের ট্রেন্ডটা পরিবর্তন হয়ে যাবে।
‘রোমিও বনাম জুলিয়েট’ চলচ্চিত্রটি নিয়ে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
আশোক পাতির এ ছবিটি দুই বাংলায় অনেকগুলো প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে। দুই বাংলায়ই এর বেশ সাড়া পাচ্ছি। ছবিটি নিয়ে অনেক ফোন পেয়েছি। ফেসবুকে স্ট্যাটাস পাচ্ছি। অবাক করার বিষয়, প্রতিটি হলেই ছিল দর্শকের উপচে পড়া ভীড়। প্রচ- শীত উপেক্ষা করে দর্শক হলে এসে ছবি দেখছেন। এ দেখে আমি কিছুটা অবাক। যেখানে শীতের কারণে মানুষ ঘর থেকে বের হতে চান না, সেখানে ছবি দেখার জন্য এ আকুলতা আমাকে মুগ্ধ করেছে।
সম্প্রতি ‘বাচসাস’ অভিনেত্রী হিসেবে পুরস্কৃত হলেন, কেমন লাগছে?
পুরস্কার পেলে সবারই ভালো লাগে। ‘বাচসাস চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৩’ পেয়ে আমিও খুব আনন্দিত। পিএ কাজলের ‘ভালোবাসা আজকাল’ চলচ্চিত্রের জন্য আমাকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এ ছবিটি নিয়ে আমি বরাবরই উচ্ছ্বসিত ছিলাম। পুরস্কার পাওয়ায় অভিনেত্রী হিসেবে আরও এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা পাচ্ছি।
অভিনয়ের ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো প্রাধান্য দেন?
মানসম্পন্ন চলচ্চিত্রের জন্য গল্প, নির্মাতা, লোকেশন, চিত্রায়নসহ আরও বেশ কিছু বিষয়ে সঠিক নজরদারি প্রয়োজন। একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানই পারে এ বিষয়গুলো সঠিক পর্যবেক্ষণের মধ্যে দিয়ে ভিন্নধর্মী চলচ্চিত্র উপহার দিতে। এ কারণে আমি অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি।
নতুন বছরের দর্শকের জন্য কী থাকছে?
২০১৫ সালের শুরু থেকেই ভিন্নধর্মী ছবি নিয়ে দর্শকের সামনে আসব। কারণ সাম্প্রতিক যে ছবিগুলোয় অভিনয় করেছি তা আগের কাজ থেকে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। কেননা, এতে কাহিনী, নির্মাতা, অভিনয় শিল্পীসহ প্রতিটি বিষয়েই সময়ের চাহিদাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এ কারণে আমার ছবিগুলো নিয়ে নতুন বছরে আমি অনেকটাই আশাবাদী।
চলচ্চিত্রের পাশাপাশি অন্য কোনো মাধ্যমে কাজ করছেন কি?
এই মুহূর্তে চলচ্চিত্র নিয়েই ব্যস্ত। অন্যকোনো কাজের জন্য হাতে সময় নেই বললেই চলে। এ জন্য অভিনয়ের বাইরে অন্যকিছু নিয়ে ভাবছি না। একজন ভালো অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। আর তার জন্য প্রচুর পরিশ্রম করছি।
আপনার পড়াশোনা নিয়ে বলুন?
আমি উত্তরা মডেল হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেছি। আর এইচএসসি পাস করি সিটি কলেজ থেকে। পরে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাশন ডিজাইনিং বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হই। আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চেষ্টা করছি। গ্রাজুয়েশনটা শেষ করতে নিউইয়র্কে এসেছি। এখানকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ অনুষদে ভর্তি হতে এসেছি।
বর্তমান কী কাজ করছেন?
আমার অভিনীত ‘অগ্নি ২’ ছবিটি ২০ ফেব্রুয়ারি ব্যাংককে শুটিং শুরু হচ্ছে। এ ছবিতে আমার সহশিল্পী থাকছেন কলকাতার ওম। ছবিটি পরিচালনা করবেন ইফতেখার চৌধুরী।
আপনার অভিনীত চলচ্চিত্র?
অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘ভালোবাসার রং’ (২০১২), ‘অন্যরকম ভালোবাসা’ (২০১৩), ‘পোড়ামন’ (২০১৩), ‘ভালোবাসা আজকাল’ (২০১৩), ‘তবুও ভালোবাসা’ (২০১৩), ‘অগ্নি’ (২০১৪), ‘কি দারুণ দেখতে’ (২০১৪), ‘দবির সাহেবের সংসার’ (২০১৪), ‘হানিমুন’ (২০১৪), ‘দেশা দ্য লিডার’ (২০১৪), ‘অনেক সাধের ময়না’ (২০১৪)। এছাড়া এ বছর জানুয়ারিতে কলকাতা ও বাংলাদেশে একসঙ্গে মুক্তি পায় ‘রোমিও বনাম জুলিয়েট’।
সামনে আপনার আর কী কী ছবি মুক্তি পাচ্ছে?
মার্চে পাচ্ছে সাফি উদ্দিন সাফি পরিচালিত ‘ওয়ার্নিং’। ১০ এপ্রিল জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত ‘অনেক দামে কেনা’ ছবিটি দর্শক দেখতে পাবেন। প্রতিটি চলচ্চিত্রে আমাকে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে হাজির হতে দেখবেন দর্শক।
প্রযোজনার কী অবস্থা?
শিগগিরই প্রযোজক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছি। আমার প্রথম সিনেমাটি নির্মিত হবে যৌথ প্রযোজনায়। কলকাতার এসকে ফিল্মসের সঙ্গে নির্মাণ করতে যাচ্ছি ‘নিয়তি’ নামের চলচ্চিত্রটি। এতে আমি প্রধান চরিত্রে অভিনয় করব। কোনো এক শুভ দিনে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো সবাইকে।
গত বছরে আপনার অভিনীত আলোচিত চলচ্চিত্র ছিল?
‘অগ্নি’, ‘হানিমুন’ ও ‘দেশা দ্য লিডার’। এই তিনটি ছবিই সুপার হিট হয়েছে। গত বছরের মতো এ বছরও ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারব বলে আমি আশাবাদী।
অভিনয় অনুশীলনের জন্য কিছু করছেন কি?
অভিনয় সবাই করেন, কিন্তু সবাই অভিনেত্রী হন না। অভিনেত্রী হওয়ার জন্য আমি পরিশ্রম করছি, শেখার আগ্রহও আমার প্রচুর। এ জন্য বাসায় একজন শিক্ষক রেখেছি। তাঁর কাছে অভিনয়ের অনেক খুঁটিনাটি বিষয় শিখছি। জিমেও ভর্তি হয়েছি। মুটিয়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচার জন্য এর চেয়ে ভালো আর কিছু নাই।
চলচ্চিত্রে কাজ করতে করতে অনেকে আবার পরিচালক হওয়ারও আগ্রহ দেখান। আপনার চলচ্চিত্রে নির্মাণে ইচ্ছে আছে কি?
পরিচালক হওয়ার কোনো ইচ্ছেই আমার নেই। যেমন আছি, তেমনই থাকতে চাই। শুধু অভিনয় করতে চাই।
চলচ্চিত্রের বাজেট সম্পর্কে আপনার অভিমত কী?
ছবির বাজেট একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। বাজেট বেশি হলে ছবি সেভাবেই তৈরি হয়। উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার থেকে শুরু করে সবকিছুতেই তার প্রভাব পড়ে। ভালো লোকেশনে কাজ করা যায়। আর কাজটা শেষ হওয়ার পর ব্যবসায়িক সাফল্যের সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
আপনার টার্নিং পয়েন্ট?
আমাকে একসময় কেউই চিনত না। ‘ভালোবাসার রং’ ছবিটি আমাকে চলচ্চিত্রে নায়িকা হিসেবে পরিচিতি দিয়েছে। এই ছবিটি আমার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট।
আপনি কি একটি প্রতিষ্ঠানের বাইরে ছবিতে স্বাচ্ছন্দ নন?
‘জাজ মাল্টিমিডিয়া’র বাইরে কোনো ছবিতে মাহি অভিনয় করবেন না, এ রকম একটা কথা শোনা যাচ্ছিল অনেক দিন ধরেই। কিন্তু এটাও গুজব! জাজ মাল্টিমিডিয়া দিয়ে আমার শুরু। তাই বলে জাজ ছাড়া কাজ করে স্বচ্ছন্দবোধ করি না। এটা সত্য নয়। ‘ময়নামতি’সহ আরও বেশ কিছু ছবিতে অভিনয় করেছি, যা জাজের বাইরে। হাতে ভালো প্রস্তাব এলে কখনও ‘না’ করবো না এ ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ আমি। আমি কারও নই। আমি আমার।
মাহির ব্যর্থতা কী?
ব্যর্থতা তো আছেই। চলচ্চিতে আসার আগে মডেলিং করেছিলাম। তখন আমাকে বাজে পরিস্থিতিরও মুখোমুখি হতে হয়েছে। কিন্তু আমি অন্ধকার গলি ধরে আলোর ঝলকানি দিতে চাইনি বলে মডেল হতে পারিনি। তবে এ নিয়ে কোনো আক্ষেপও নেই।
না ভোলার মতো স্মৃতি…
‘অগ্নি’র শুটিংয়ে একটি দৃশ্যে আমাকে আট তলার ওপর থেকে লাফ দিতে হয়েছে। সবাই ভয় পেয়েছিল। কিন্তু আমি অনেক স্বাভাবিক ছিলাম। এমনকি মুখে হাসি হাসি ভাবটাও ধরে রেখেছিলাম। আমি সাঁতার জানি না। একটি সাঁতারের দৃশ্যের জন্য পাঁচ মিনিটের মধ্যে আমাকে সাঁতার শেখানো হয়। তারপর সমুদ্রের একেবারে গভীরে আমি আর শুভ ভাই সাঁতারের দৃশ্যটা করি।
সুপারস্টার মাহি…
আমি যে চলচ্চিত্রের নায়িকা, এটা আমার মনেই হয় না। শুধু ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালে সেটা অনুভব করি। এখন মা বাইরে একা বের হতে দেন না। আর বের হলেও সবাই যখন অবাক হয়ে আমার দিকে তাকায়, তখন মনে হয় আমি সুপারস্টার মাহি।
যা খুব মনে পড়ে যায়…
আমি আসলে আমার স্কুল আর কলেজ জীবনকে অনেক স্মরণ করি। তখন অনেক চিঠি পেতাম, অনেকেই প্রেমের প্রস্তাব দিত। কিন্তু এখন আর কেউ দেয় না। পার্কে প্রেমিক প্রেমিকাদের দেখলে আমার খুবই আফসোস লাগে।
প্রেমিকা চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে প্রেমে পড়া হয়েছিল কি না?
নানা সময়ে এরকম শোনা যায়, আমিও শুনি। কিন্তু এগুলো শুধুই গুজব।
বিয়ে নিয়ে ভাবছেন কি?
এখনও এ নিয়ে কিছু ভাবছি না।
জীবনসঙ্গী হিসেবে কেমন ছেলে আপনার পছন্দ?
আমি জীবনসঙ্গী হিসেবে কালো বা শ্যামলা, লম্বা ছেলেদেরই বেশি পছন্দ করি। তাকে কিন্তু আমার মতোই দুষ্টু হতে হবে। মানে দুষ্টু ছেলে বিয়ে করতে চাই। তবে বোকা নয়, ভালো-বুদ্ধিমান হতে হবে।
প্রথম ক্যামেরার সামনে দাড়ানোর অভিজ্ঞতা নিয়ে বলুন?
প্রথমবার ক্যামেরার সামনে দাঁড়াই ‘ভালোবাসার রঙ’ ছবিতে। এখনও সেই দিনের কথা মনে পড়লে হাসি পায়। ওই সময়ের অনুভূতি কেমন ছিল তা বলতে পারছি না। সকালেই মেকাপ নিয়ে বসেছিলাম। কিন্তু রাত ১১-১২টাতেও আমার কল আসেনি। অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুম থেকে ডেকে তুলে আমাকে ক্যামেরার সামনে দাঁড় করানো হয়েছিল।
অভিনয়ের প্রয়োজনে রোদে পুড়তে হয়, বৃষ্টিতে ভিজতে হয়। খারাপ লাগে না?
খারাপ লাগবে কেন? কষ্ট না করলে তো আর কেষ্ট মিলবে না।
টানা কাজ করছেন। ক্লান্তি লাগে না?
অভিনয় আমার নিয়তি। আনন্দ নিয়ে কাজ করলে ক্লান্তি লাগে না।
পর্দায় আপনি কখনও প্রেমিকা আবার কখনও অগ্নিময়ী নারী। পর্দার বাইরে আসলে আপনি কেমন?
পর্দার বাইরের মাহি অনেক দুষ্টু। অনেক চঞ্চল। সিনেমায় যেরকম দেখা যায়, কখনও কখনও তার চেয়েও বেশি দুষ্টুমি করি। বাস্তব জীবনেও আমি অগ্নিকন্যা। খুবই ঝগড়াটে স্বভাবের মেয়ে আমি। বলতে পারেন ঝগড়া করাটা আমার একধরনের শখ। আমি খুব বেশি কথা বলি আর হাসি। আর খুব অল্পতেই রেগে যাই। তবে ফেসবুকিং করতে পছন্দ করি। ফেসবুকে বন্ধুদের সঙ্গে দুষ্টুমি করতে ভালো লাগে।
এই অসম্ভব চঞ্চল মেয়েটি রান্না করতে পারে?
রান্না করতে পারি। কিন্তু সাধারণত করা হয় না। ঈদ বা কোনো উৎসব ছাড়া রান্না করা হয় না। গরুর মাংস, সবজি, বিরিয়ানিসহ বিভিন্ন খাবার রান্না করতে পারি। নিজের রান্না খেয়ে নিজেই প্রশংসা করি। গত রোজার ঈদে গরুর মাংস রেঁধেছিলাম। সবাই খেয়ে প্রচুর প্রশংসা করেছেন।
সিনেমা দেখা হয় কি?
এক সময় প্রচুর ছবি দেখতাম। তবে সময়ের অভাবে ইদানিং আর ছবিও দেখা হয় না।
অবসর সময়ে কী করেন?
অভিনয়ে ব্যস্ততার কারণে তেমন অবসর সময় হয়ে ওঠে না। কখনও অবসর পেলে গান শুনি। ফেসবুকিং করি। সুযোগ পেলে বেড়াতে যাই। মাঝেমধ্যে শপিংয়ে যাই।
বই পড়েন কি?
খুব কম পড়া হয়। আগে থেকেই বই পড়ার অভ্যাস বেশি ছিল না। তবে হুমায়ূন আহমেদের বই পড়তে আমার ভালো লাগে।
আপনার জন্মস্থান কোথায়?
আমার গ্রামের বাড়ি রাজশাহী। তবে আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকাতেই।
শুনলাম, আপনার নাম আপনার দাদা রেখেছেন। কেন রেখেছেন?
আমার ‘মাহিয়া’ নামটি রেখেছিলেন দাদা। পাঞ্জাবি এই শব্দের অর্থ প্রেমিকা বা সঙ্গিনী। আমার দাদা বেঁচে থাকলে নাতনির নামের সার্থকতা দেখতে পারতেন। তিনি আমাকে অনেক আদর করতেন।
আপনার প্রতিদিনের রুটিন সম্পর্কে বলুন?
সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ঘুম ভাঙলেও প্রতিদিনের কাজ অনুযায়ী বিছানা ছাড়ি। এরপর নিয়ম মাফিক কাজে নেমে পড়া। শুটিং শেষে রাতে বাড়ি ফেরা। আবার সূর্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জীবন চলা।
সারাদিন যতই থাকেন অ্যাকশন আর কাটে। এরপরও আপনি ফেসবুকে সরব। নিয়মিত স্ট্যাটাসও পোস্ট করেন। আপডেট আর নানা মুহূর্তের ছবি দেখে ভক্তরাও নেন বাড়তি আনন্দ। এ বিষয়ে আপনার মত?
ফোনটা আসলে আমার হাতেই থাকে। শুটিংয়ের ফাঁকে ফাঁকে অবসরে ফেসবুকে পোস্ট দেই। এতে আসলে বাড়তি সময়ের কোনো দরকার আছে বলে মনে করি না। বরং আমি সময়ের সঙ্গে থাকতে পছন্দ করি।
অভিনয়ে আপনার আদর্শ?
আমার আদর্শ শাবানা। আমি হয়তো বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করছি। তবে এখনও চরিত্রগুলোকে মনের মতো করে ফুটিয়ে তুলতে পারিনি। আমার জায়গায় অন্য কেউ হলে হয়তো আরও ভালো করতেন বলে আমার মনে হয়। তবে আমি সেরা অভিনয় দর্শকদের উপহার দিতে চাই।
অনেকের ধারণা, মাহি যেভাবেই দর্শকের সামনে আসছেন, সেভাবেই মানুষের ভালোবাসা ও সফলতা পাচ্ছেন। অভিনয়ে হুট করে এলেও মাহি রূপালি পর্দার প্রেমে বাঁধা পড়ে গেছেন। আপনি কি বলেন?
আমি খুব তাড়াতাড়ি অনেক কিছু পেয়েছি। এটা ধরে রাখতে আমাকে আরও পরিশ্রমী হতে হবে। প্রতিদিনই এক একটা ছবি থেকে শিখছি। ভালো কাজের ইচ্ছা নিয়ে কেউ চেষ্টা করলে সফলতা আসবেই।
‘ভালোবাসা আজকাল’ ছবিতে শাকিব খানের বিপরীতে অভিনয় করেন। এরপর গুজব ওঠে, শাকিবের সঙ্গে অভিনয় করলে শাকিব খানই হাইলাইট হয়ে যান। এই কারণেই নাকি আপনি আর শাকিবের সঙ্গে অভিনয় করেননি। এ বিষয়টি কি বলেন?
শোনা কথায় কান দিতে নেই। ঠিক এই কারণেই শাকিব খানের সঙ্গে অভিনয় করছি না যে, তা নয়। পরিচালকরা আর ডাকেননি বলেই তার সঙ্গে আর অভিনয় করা হয়ে ওঠছে না। আমি আসলে সবার সঙ্গেই অভিনয় করতে চাই, তবে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আমি নায়িকা হিসেবেই নিজেকে পরিচিত করাতে চাই।
অনেকেই মনে করেন শাবনুর-মৌসুমীর পর মাহি আরেকটা বাঁকবদল। বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন?
শাবনুর, মৌসুমী আপুরা তো অনেক বড় মাপের অভিনয় শিল্পী। তাদের মতো হতে পারাটাও সৌভাগ্যের। এমনটা যদি সত্যিই কেউ বলে থাকেন তাহলে এটাকে সৌভাগ্যই বলব।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বলুন?
আমি আসলে পরিকল্পনা করে কিছু করতে পারি না। যেটা দিনে করব ভাবি, সেটা রাতে হয়। মানে সব সময় বিপরীতটা হয়। ভবিষ্যতে নিজেকে সাফল্যের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই আমি। সবাই যেন মনে রাখে, মাহি নামে একজন সুপারস্টার ছিল।