





তমা মির্জা। ‘নদীজন’ সিনেমায় অনবদ্য অভিনয়ের জন্য পেয়েছেন ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৫’।






গত ২৮ জুলাই শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ছবি ‘গ্রাস’। এতে অভিনয় করছেন তমা মির্জা। ‘গ্রাস’ আর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার নিয়ে কথা বলেন চ্যানেল আই অনলাইনের সাথে।
কেমন আছেন?
এখন অনেক ভালো আছি।
‘অনেক ভালো’ কেন?
২৪ জুলাই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, ২৮ জুলাই ‘গ্রাস’ মুক্তি পেয়েছে। সব মিলিয়ে ভালো আছি।
‘গ্রাস’ ছবিটি নিয়ে বলুন।
‘গ্রাস’ ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ছবি। ‘নদীজন’ও ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ছবি। ‘গ্রাস’আমাদের জীবনেরই একটি চিত্র। চলচ্চিত্র জগতের একটি গল্প। একজন উঠতি পরিচালকের সংগ্রামের চিত্র ‘গ্রাস’। যিনি পর্দায় নানা মানুষের গল্প ফুটিয়ে তোলেন। তার নিজের জীবনটাও যে একটা চলচ্চিত্র, সেটাই দেখানো হয়েছে।
এই ছবিতে আপনার চরিত্র কী?
পরিচালকের গার্লফ্রেন্ডের চরিত্রে অভিনয় করেছি।
চরিত্রটি চ্যালেঞ্জিং?
মোটেই না, চরিত্রটি আমার লাইফস্টাইলের মতোই। বর্তমান সময়ের সাধারণ একটি মেয়ে। যার বয়ফ্রেন্ড উঠতি পরিচালক। চরিত্রটি খুব বেশি চ্যালেঞ্জিং লাগেনি আমার কাছে। কেননা আমিও সাধারণ একটি মেয়ে। আমিও তো কারও না কারও গার্লফ্রেন্ড। ‘নদীজন’ ছবিতে যেমন আমার ভাষা শিখতে হয়েছে। হাঁটাচলা শিখতে হয়েছে। এই ছবিতে তেমন কিছু শিখতে হয়নি।
‘আমিও তো কারও না কারও গার্লফ্রেন্ড’ লাইনটা কিন্তু হেডিং করে দেব।
(হাসি) এটা জাস্ট কথার কথা বলেছি।
‘গ্রাস’ নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কী?
ছবিটা দর্শক হলে গিয়ে দেখলে খুবই খুশি হব। সবাই হিরোর জীবন সম্বন্ধে জানতে চায়। হিরোইনের জীবন জানতে চায়। কিন্তু একজন পরিচালক কীভাবে পরিচালক হন, সেটা বলা হয়েছে গল্পে। এমন গল্পে আমাদের আর কোনো সিনেমা তৈরি হয়নি। তাই ‘গ্রাস’ নিয়ে আমার প্রত্যাশা বেশি।
এটা খুবই দুঃখজনক। আমাদের দেশে আসলেই ভালো ছবির প্রতি কারও আগ্রহ নেই। ভারতে আর্ট ছবি হলে চলে আবার বাণিজ্যিক ছবিও চলে। কিন্তু আমাদের দেশের হলমালিকরা সুন্দর ছবিগুলোর ব্যাপারে আগ্রহ দেখায় না। হয়তো এটা চালালে তাদের একটু লস হতো, কিন্তু এসব ছবি না চললে দর্শকের রুচি পরিবর্তন হবে কী করে?
তমা মির্জার নামের সঙ্গে প্রাপ্তি যোগ হচ্ছে। কেমন লাগছে?
সবাই বিভিন্ন পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানাতেন। আমি বলতাম আগে আমার একটা প্রাপ্তি আসুক তারপর যাব। সেটা যে এতবড় প্রাপ্তি হবে, ভাবিনি। বিষয়টা খুবই ভালো লাগার।
ছোট বয়সে বড় বড় অর্জন চাপ না আত্মবিশ্বাস, কোনটা বাড়াচ্ছে?
(উচ্ছ্বসিত হাসি) আমাকে বড় বানিয়ে দিচ্ছে। আমি খুবই ছোটখাটো একটা মানুষ। অথচ এই অর্জনগুলো ভাবগম্ভীর বানিয়ে দিচ্ছে। বুঝেসুঝে কথা বলতে হচ্ছে। যেসব প্রোগ্রামে যাচ্ছি, বড় মাপের সব ডিরেক্টর প্রডিউসার থাকছেন। তাদের সাথে তাল মেলাতে হচ্ছে। আমি হিমশিম খাচ্ছি। এসবের ভালো দিক হলো, জ্ঞানের পরিধি বাড়ছে। জানা ও সম্মানের জায়গাটা বিস্তৃত হচ্ছে। ফলে আত্মবিশ্বাস বাড়ছে। চাপও বাড়ছে। ভালো কাজের চাপ।
কখন কীভাবে জানলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাচ্ছেন?
আমি বন্ধুদের সঙ্গে ডিনার করব বলে একটা রেস্টুরেন্টে বসছিলাম। হঠাৎ দেখি ফেসবুকে আমাকে ট্যাগ দিয়ে বন্ধুরা অভিনন্দন জানাচ্ছে। বিষয়টা বুঝতে পারলাম না। একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, কেন অভিনন্দন জানাচ্ছ? তারা নিউজ পড়তে বলল। আমার বিশ্বাস হলো না। বললাম, মাথা ঠিক আছে? গ্রহণযোগ্য কোনো পত্রিকার সংবাদ না পেলে বিশ্বাস করব না। ডিরেক্টর মুস্তাফিজুর রহমান মানিকের একটা পোস্ট দেখলাম। একে ওকে ফোন করি আর উত্তেজনা বাড়তে থাকে। প্রথম সারির একটি পত্রিকা নিশ্চিত করল। তখন আমার আনন্দ দেখে কে?
তখন কি বন্ধুদের ডিনারের বিল আপনাকে দিতে হলো?
তখন আর ডিনার করিনি। বন্ধুদের সঙ্গে মিষ্টি কিনে বাসায় গেলাম। আব্বু বলল, মিষ্টি কেন? আমি নিউজ দিয়ে বললাম, পড়ো। আব্বু পড়ে বলে, আল্লাহ! এখানে তো তোমার নাম! তুমি ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড পেয়েছ! আসলে এই ছবিটা যে জাতীয় পুরস্কারের জন্য জমা দিয়েছে সেটাই জানতাম না।
পুরস্কার নেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী কী বলছিলেন?
তিনি বললেন, তোমার অভিনয় ভালো লেগেছে। আমি ধন্যবাদ দিলাম। দোয়া চাইলাম। পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের পরে আরও কথা হয়েছে। চলচ্চিত্র নিয়ে। তিনি ভালো ভালো কাজ করতে উৎসাহ দিলেন।
‘নদীজন’ ছবিতে কাজের গল্পটা শুনতে চাই।
নদীজনে কাজ করতে আমার অনেক কষ্ট হয়েছে। প্রথমত গ্রামের মানুষের কথা বলা ও হাঁটাচলা রপ্ত করা। এরপর, কালো মেকআপ। আমি যতটা ফর্সা, গল্প তার চেয়ে কালো কাউকে ডিমান্ড করে। সকালে গিয়ে সারা গায়ে কালো মেকআপ নিতাম। বাসায় ফিরে সেই মেকআপ তুলতে অনেক ঝক্কি পোহাতে হতো। পরদিন আবার সারা গায়ে কালো মেকআপ। শুধু আমি না, সবাই এমন পরিশ্রম করেছে। তখন মনে হয়েছে ছবি সংশ্লিষ্ট সবাই পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য।
আপনাকে মেকআপ দিয়ে আরও কালো বানানো হচ্ছে?
এর আগেও তো এ ধরণের কাজ হয়েছে। সেখানে মৌসুমী আপু, নিপুণ আপু কাজ করেছেন। তারাও কালো মেকআপ করেছেন। ফলে এ নিয়ে চিন্তিত ছিলাম না। সত্যি বলতে বাণিজ্যিক ধারার শিল্পীরা ব্ল্যাক মেকআপ, গ্রাম্য ডায়ালগ এগুলো প্রেফার করে না। তারা চায় বেশি গ্ল্যামারাস হয়ে পর্দায় আসতে। আমি নায়িকা হওয়ার চেয়ে অভিনেত্রী হওয়াকে গুরুত্ব দেই। সব ধরণের চরিত্রে কাজ করতে চাই। আমার খারাপ লাগেনি।
দর্শকদের উদ্দেশে কিছু বলতে চান?
দর্শক, শুধু মারামারি আর আইটেম গান নয়, আসুন ভালো ছবিগুলোও দেখি। এতে আনন্দের পাশাপাশি প্রচুর বার্তা থাকে। চিন্তা ও রুচির রসদ থাকে। সব ধারার ছবিই দেখতে হবে।
আপনাকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন।
চ্যানেল আই অনলাইনকে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।
ছবি: সংগৃহীত