Home / মিডিয়া নিউজ / ‘আমার জন্মদিনে বাবা কখনোই শুটিং করতেন না’

‘আমার জন্মদিনে বাবা কখনোই শুটিং করতেন না’

বাবাকে আমার সবসময় মনে পড়ে। আমার এখনো মনে হয়, বাবা আমার সঙ্গে ছায়া-সঙ্গী হিসেবে রয়েছেন।

তিনি যে নেই, এখনো তা বিশ্বাস করতে পারি না। আমার সমস্ত চেতনাজুড়েই তার অস্তিত্ব।

বাবাকে নিয়ে আমার অনেক স্মৃতি রয়েছে। তবে কিছু কিছু স্মৃতি বিশেষ হয়ে থাকে জীবনে। যেমন,

আমার জন্মদিনে বাবা কখনোই শুটিং করতেন না। ঐদিন যেভাবেই হোক ছুটি নিতেন উনি। এখন সবাই

চিন্তা করতে পারে এতো বড় সুপারস্টার, কতো ব্যস্ততা ছিল। কিন্তু এরপরও এই কাজটি উনি আমার জন্য করতেন। কিন্তু এই কাজটি আমার ভাইবোনের বেলায় করতো না। কথাগুলো বলছিলেন প্রয়াত মহানায়ক বুলবুল আহমেদের মেয়ে ঐন্দ্রিলা আহমেদ।

সোমবার মহানায়ক বুলবুল আহমেদের নবম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১০ সালের এই দিনে তিনি পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান তিনি। বাবাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ঐন্দ্রিলা বলেন, ছেলে-বেলায় আমি যখন বাবার অফিসে যেতাম তখন তার চেয়ারটা ছেড়ে দিয়ে আমাকে বসতে দিতো জায়গায়। আমাকে নিজের চেয়ারে বসিয়ে আব্বু সবসময় সামনে বসতো। কোনো অতিথি বা পরিচিতজন দেখা করতে আসলেও আব্বু যেভাবে যেখানে বসেছিলেন সেখানেই বসে থাকতেন আর আমি আব্বুর চেয়ারে!

আমি সেখানে বসে টেবিলের নিচের কলিংবেল বারবার টিপতাম। অফিস সহকারী এলে তাকে বলতাম চকোলেট, কোক নিয়ে আসুন। অফিসের প্যাডে লিখতাম, ফোন এলেও আমি ধরে কথা বলতাম। বাবা সবসময় আমাকে ‘আম্মি’ বলে ডাকতেন। অফিসে গেলেই আম্মি কী খাবে, কী লাগবে জিজ্ঞেস করতেন। সেখানে মিটিং চলতো আমি তার মধ্যেই আমার মতো ঘুরে বেড়াতাম। বাবা কিছুই বলতেন না। বাবার সঙ্গে কাটানো এমন অনেক মুহূর্ত আমার জীবনে বিশেষ স্মৃতি হয়ে আছে।

তিনি বলেন, বাবার জন্যই আমি আজ অভিনয়ে। তার ব্যক্তিত্ব আমাকে আকৃষ্ট করে। আমার বাবা বেঁচে থাকার সময় বিভিন্নভাবে বলেছিলেন- আমি মরে গেলে আমার মেয়ে আমাকে ধরে রাখবে। সে চেষ্টা এখনো অব্যাহত। মহানায়ক বুলবুল আহমেদের মেয়ে হতে পারাটা অন্য যে কোনো পরিচয়ের চেয়ে বেশি তৃপ্তির ও গর্বের।

একজন মহানায়ক কালে কালে জন্মায় না। শুধু নিজের মনের মধ্যেই নয়, বুলবুল আহমেদকে মানুষের কাছে বাঁচিয়ে রাখতে চান যুগের পর যুগ। মেয়ে হিসেবে এরই মধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন ঐন্দ্রিলা। তিনি জানান, ২০১০ সালে বাবা বুলবুল আহমেদকে নিয়ে ‘এক কিংবদন্তির কথা’ শিরোনামে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন তিনি। তাকে নিয়ে ‘একজন মহানায়কের কথা’ নামের বইও লিখেছি। এটা আমার জন্য বড়প্রাপ্তি। মনে হয়েছে যে, আমি বাবার জন্য কিছু করতে পেরেছি।

এছাড়া বাবার জীবনী নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চান ঐন্দ্রিলা। তিনি বলেন, বাবা একজন ব্যাংকার থেকে মহানায়ক হয়েছেন, তার জীবন চলচ্চিত্রের মতই ছিলো। তাছাড়া বাবার ইচ্ছাতে আমি চলচ্চিত্র নিয়ে পড়াশোনাও করেছি। তাই ভবিষ্যতে কখনো সুযোগ হলে বাবার জীবনী নিয়ে আমার চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চাই।

ঐন্দ্রিলা আহমেদ জানান, বাবার নবম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এরইমধ্যে অভিনেতা এটি এম শামসুজ্জামানকে বুলুবুল আহমেদ স্মৃতি সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। আর আজ পারিবারিক ভাবে দোয়া মাহফিল ও এতিমদের জন্য ছোট্ট আয়োজন করা হয়েছে।

সবশেষ চলতি বছরের শুরুর দিকে ই-লার্নিং নিয়ে চারটি বিজ্ঞাপন নির্মাণ করেন ঐন্দ্রিলা। ১৯৮৮ সাল থেকে টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করছেন ঐন্দ্রিলা। এ পর্যন্ত প্রায় শতাধিক নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। শুধু অভিনয়ই নয় সংগীতচর্চাও চালিয়ে যাচ্ছেন নিয়মিত। গানের তালিম নিয়েছেন সঞ্জীব দে ও সাদি মহম্মদের কাছে। তিনি কত্থক ও ভরতনাট্যমেরও প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।

Check Also

আমি নায়িকা ছিলাম, নায়িকা হয়েই মরবো: নূতন

ঢাকাই সিনেমার সোনালি যুগের জনপ্রিয় অভিনেত্রী নূতন। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে মূল থেকে পার্শ্ব চরিত্র; তিন শতাধিক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *