





একজন নবীন মডেল। তার আবির্ভাব হয় ২০০৫ সালে। একটি গ্রামীণফোনের বিজ্ঞাপন দিয়ে মূলত তিনি






দর্শকের সামনে হাজির হয়েছিলেন। এরপর দর্শকমহলে সুপরিচিতি এবং পুরস্কারই পেলেন সেই বিজ্ঞাপন দিয়ে।






পরবর্তী প্রায় এক দশক ধরে তিনি নাট্যাঙ্গনে নিজের নাম সমুজ্জ্বল করেন। আর চলচ্চিত্রে গত এক যুগে






দর্শকদের বিমোহিত করে হয়েছেন সবচেয়ে নন্দিত অভিনেতা। তিনি পথের ক্লান্তি ভুলে আসা এক






মাতৃভক্ত ছেলে। মনের মানুষের আয়নায় তিনি রুপকথার নায়ক। আদর করে সবাই তাকে ডাকে সোনাই। নাম তার চঞ্চল চৌধুরী।
পড়াশোনায় তুখোড় এই অভিনেতা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায় যুক্ত হন মঞ্চ নাটকে। মূলত সেখান থেকেই নাট্যাঙ্গনে পা রাখেন তিনি। চঞ্চল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার ছাত্র ছিলেন। ওই সময় নাট্যগুরু মামুনুর রশীদের দল আরন্যক-এর যাত্রী হয়ে তিনি অভিনয় করেন ‘ওরা কদম আলী’, ‘ময়ুর সিংহাসন’, ‘রাঢ়াঙ’-এর মতো বিখ্যাত মঞ্চ নাটকে। টিভি নাটকে তার অভিষেক হয় মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘তালপাতার সেপাই’ নাটকের মাধ্যমে।
শুরুতে ফারুকীর নাটক করে বসে থাকেননি চঞ্চল, এরপর বিভিন্ন পরিচালকের নানা রকম গল্পের কাজে সরব ছিলেন তিনি। এমনকি ফারুকীর বিজ্ঞাপনেও দেখা যায় তাকে। তার নির্দেশনায় গ্রামীণফোনের বিজ্ঞাপনে অভিনয় করে দর্শক মহলে সুপরিচিতি পান চঞ্চল চৌধুরী। একই বছর গিয়াসউদ্দিন সেলিমের ‘এনেছি সূর্য্যের হাসি’ ধারাবাহিকটি পরিচিতি আরো বাড়িয়ে দেয় তার। এরপর শুধু এগিয়ে চলা।
এখানেই শেষ নয়, এরপর জনপ্রিয় নির্মাতা সালাউদ্দিন লাভলুর নাটকে হাজির হন চঞ্চল। এই নাটকগুলো তার ক্যারিয়ারে অন্যরকম খ্যাতি এনে দিয়েছিল। এর মধ্যে ‘ভবের হাট’, ‘সাকিন সারিসুরি’, ‘ঘর কুটুম’, ‘পাত্রী চাই’, ‘ওয়ারেন’, ‘নিখোঁজ সংবাদ’, ‘পত্র মিতালি’, ‘বউ’, ‘সার্ভিস হোল্ডার’, ‘সোনার ডিম’, ‘আলতা সুন্দরী’, ‘জামাই মেলা থেকে খেলা’, ‘লাল খাম বনাম নীল খাম’, ‘ইডিয়ট’, ‘দ্যা ইজম লিমিটেড’সহ আরো দর্শকপ্রিয় নাটকে অভিনয় করে নিজেকে নন্দিত করেছেন চঞ্চল।
তিনি শুধু নায়ক হিসেবে নয় তার সুপরিচিতি রয়েছে গায়কীতেও। বেশ কয়েকটি গান তিনি এরইমধ্যে গেয়েছেন। তার মধ্যে চঞ্চলের গাওয়া ‘নিথুয়া পাথারে’ ও ‘বকুল ফুল বকুল ফুল’ গানটি শুনেনি এমন শ্রোতা খুব কমই পাওয়া যাবে। পুরো বাংলাদেশে এই গান দুটো বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। গান গেয়েও তিনি দর্শকের কাছে অন্যভাবে পরিচিতি পেয়েছিলেন।
তবে মঞ্চকর্মী, মডেল, গায়ক, টিভি অভিনেতা হিসেবে জনপ্রিয়তা পাওয়ার পর চঞ্চল সিনেমার নায়ক হয়ে চূড়ান্ত সফলতা পেয়েছিলেন। এই প্ল্যাটফর্মে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জনেরও সুযোগ পান। এই মাধ্যমে তিনি নিজেকে পুরোপুরি মেলেছেন, আবার ভেঙেছেনও। কম সিনেমায় অভিনয় করেও গত এক দশকে সবচেয়ে নন্দিত হয়েছিলেন এই অভিনেতা। মূলত সিনেমায় তার শুরুটা হয় ২০০৬ সালে। তিনি তৌকির আহমেদের ‘রুপকথার’ গল্প দিয়ে এই যাত্রায় শুরু করেন। ভিন্নধর্মী এই ছবি দিয়ে সিনেমাপ্রেমীদের কাছে বেশ প্রশংসিতও হয়েছিলেন চঞ্চল। এরপর তিন বছর বিরতি দিয়ে ২০০৯ সালে গিয়াসউদ্দিন সেলিমের ‘মনপুরা’য় সোনাই রুপে হাজির হন এই অভিনেতা।
সোনাই হয়ে চঞ্চল কী কী অর্জন করেছেন তা হয়ত সবারই জানা। এই সিনেমায় অভিনয় করে পুরো বাংলাদেশের কাছে পরিচিতি পেয়েছিলেন চঞ্চল। এমনকি এই সিনেমায় বাংলা চলচ্চিত্রের জগতের এক অনন্য ইতিহাস তৈরি করেছিলেন তিনি। মুক্তির পর ছবিটি যেমন তোলপাড় করেছে, তেমনই বাণিজ্যিক সফলতাও পেয়েছে। সে সঙ্গে অর্জন করেছে সমালোচক প্রিয়, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত।
এরপর চঞ্চল যথাক্রমে হাজির হয়েছেন, ‘মনের মানুষ‘ ও ‘টেলিভিশন’-এর মতো সিনেমায়। এই দুটো সিনেমায় ভালো কিছু করতে না পারলেও চঞ্চল পুনরায় আলোড়ন তুলতে সক্ষম হন ২০১৬ সালে। এই সময়ে এসে তিনি অমিতাভ রেজার ‘আয়নাবাজি’ সিনেমায় অভিনয় করেন। এটি দর্শকমহলে ব্যাপক সাড়া জাগায়। বিশেষ করে ‘বুঝনাই ব্যাপারটা’ ডায়লগে তিনি পুরো পৃথিবীকে বুঝিয়েছিলেন, চঞ্চল একজন জাত অভিনেতা। যিনি শুধুমাত্র ‘টেলিভিশন’ সিনেমা ছাড়া বাকি সব সিনেমার জন্য মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার’সহ নানা বেসরকারিভাবে পুরস্কৃত হয়েছেন। চঞ্চল ‘মনপুরা’ ও ‘আয়নাবাজি’র জন্য পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার।
এদিকে, আয়নাবাজির পর চঞ্চলের ক্যারিয়ারে আসে আরো অনেক সিনেমা। তবে সবগুলোতে তিনি হাজির হননি। সেখান থেকে বেছে বেছে তিনি কাজ নিয়েছেন হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয় উপন্যাসের চলচ্চিত্রায়ন ‘দেবী’তে। এর মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্রের প্রথম মিসির আলী হয়ে পর্দায় এসেছেন চঞ্চল।
এই অভিনেতা ব্যক্তিজীবনে বিয়ে করেন ডা. শান্তনা সাহাকে ২০০৭ সালে। তাদের কোলজুড়ে আছে এক পুত্র সন্তান। এদিকে, ছেলে চঞ্চলের সাফল্যে এই বছর তার মা পেয়েছেন ‘গরবিনী মা’র সম্মান।