Home / মিডিয়া নিউজ / কেমন কাটে সিনেমার মেকআপ আর্টিস্টদের জীবন?

কেমন কাটে সিনেমার মেকআপ আর্টিস্টদের জীবন?

সিনেমার একটি অতিগুরুত্বপূর্ণ অংশ মেকআপ। নায়ক নায়িকাদের মেকআপ করে সুন্দরভাবে ক্যামেরার

সামনে তুলে ধরেন মেকআপ আর্টিস্ট। শুধু তাই নয়, চেহারা পাল্টে দেয়ার নজিড়ও দেখা যায়

বিভিন্ন সিনেমায়। শুটিংয়ের সময় সর্বক্ষণ নায়ক-নায়িকাদের পাশে থাকেন মেকআপ আর্টিস্টরা।

সিনেমা মুক্তি পায়। নায়ক নায়িকা হয়ে উঠেন তারকা। সিনেমায় এবং নায়ক নায়িকার জীবনে একটি বড় ভুমিকা রাখেন মেকআপ আর্টিস্টরা।

‘নায়ক এবং নায়িকা বলেন। প্রথমে কিন্তু তাঁরা ঢোকে মেকআপ রুমে। আমরা সুন্দর করে তাঁদের রেডি করি। তারপর তাঁরা সেটে যায়। আমরাই দেখি তাঁদের আসল রুপ। সেই মেকআপের পরেই ক্যামেরাম্যান থেকে ডিরেক্টররা তাঁদের ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে। শুরুর কাজটা কিন্তু আমরা করি। কিন্তু আমাদের কাজ অনুয়ায়ী আমরা মূল্যায়ন পাই না।’ বলেন মেকআপ আর্টিস্ট রেবতি।

শুটিংয়ের সময় সর্বক্ষণ নায়ক নায়িকাদের পাশে অবস্থান করে মেকআপ আর্টিস্ট। কখনো হালকা টাচআপ। কখনো চুল ঠিক করে দেয়া। কখনো আয়না নিয়ে পাশে দাড়িয়ে থাকা। এভাবেই সর্বক্ষণ নায়ক নায়িকার পাশে থাকেন মেকআপ আর্টিস্টরা।

রেবতি আরও বলেন, ‘দুইদিন কাজ করি। আবার দুইদিন বসে থাকতে হয়। এখন তো কাজ কমে গেছে। একটা কাজ যে কবে আসবে সেটাও অনেক সময় জানি না। সবার পেমেন্ট আসে। আমাদের পেমেন্টের খবর নেই। আমরা আগে যে টাকা পেতাম। ম্যাটেরিয়াল কিনে আমাদের পুষতো। তখন শিফটে টাকা পেতাম। ডে বাই ডে না। যে শিফটের কাজ করতাম। তখনই টাকা পেতাম।’

সিনেমায় যাদের এত অবদান। তাঁদের অবস্থা খুবই করুণ। দিনশেষে অনেকেই পায় না নিজের পারিশ্রমিক। ব্যাতিক্রম ঘটে তারকা শিল্পীদের মেকআপ আর্টিস্টদের বেলায়। যেমন সবুজ আছে শাকিব খানের। জাভেদ আছে মাহিয়া মাহির মেকআপ আর্টিস্ট হিসেবে। কিন্তু শত শত মেকআপ আর্টিস্ট থাকে অবহেলায় পড়ে। এফডিসিতে নেই তাদের আড্ডা কিংবা বিশ্রাম নেয়ার আলাদা কোন জায়গা। নেই কোন সমিতি।

এর জন্য তো বিদেশ থেকে কোর্স করে আসাও উচিত। দক্ষতা বাড়ে তাতে। ‘যখন আমি ‘স্পিড’ সিনেমাটি করতে যাই। তখন অনন্ত জলিল স্যার আমাকে ভারতে একটি কোর্স করতে পাঠায়। অনন্ত স্যারই সকল খরচ বহন করে আমাকে কোর্স করিয়েছিলেন। এমনভাবে শিখে আসলে তো ভালো কিছু করা সম্ভব’ বললেন মনির। এ সময়ে প্রায় সব তারকার মেকআপ করেছেন মনির।

এমনই সেলিম মোহাম্মদকে এফডিসির সবাই চেনে শাবনূরের সেলিম বলে। মেকআপ আর্টিস্ট হিসেবে ২৫০টির মতো ছবিতে কাজ করেছেন এ পর্যন্ত। নায়করাজ রাজ্জাক, আলমগীর, ফারুক, ইলিয়াস কাঞ্চন, শাকিব খান, দিতি, ববিতা, শাবানা, রোজিনা, মৌসুমী, শাবনূর, অপু বিশ্বাসসহ আরো অনেকের মেকআপ করেছেন। ওপার বাংলার মিঠুন চক্রবর্তী, প্রসেনজিতেরও কাজ করেছেন। তবে শাবনূরের শতাধিক ছবির মেকআপ আর্টিস্ট ছিলেন সেলিম। সে কারণে মিডিয়াপাড়ায় সবাই তাঁকে চেনে শাবনূরের সেলিম নামে। তিনিও হতাশ বর্তমান সময় নিয়ে।

নায়িকা কবরীর মেকআপ ম্যান ছিলেন কাদরী নামের একজন। কবরীর অন্যতম কাছের মানুষও ছিলেন তিনি। তাঁকে নিয়ে একদিন কবরী বলছিলেন ‘তাঁর হাতের জাদু আমাদের আরও গ্ল্যামারাস করে তুলত। আমাকে দেখে যে এক সময় যুবকরা পাগল ছিল। তার কৃতিত্ব তাঁরও কম নয়। আবার চরিত্রের প্রয়োজনে সুন্দর মুখকে অসুন্দর করতেও তাঁর জুড়ি মেলা ভার। সুতরাং, ছবির আশুকাকা ছিলেন বাংলা সিনেমার মেকআপ ম্যানদের পথিকৃৎ। তিনি মারা যাওয়ার পর কাদরী মেকআপ ম্যান হিসেবে নতুন একটি ধারা তৈরি করেছিলেন। এখন যারা ফিল্ম কিংবা টিভি নাটকে সাজসজ্জার কাজ করেন তাদের বেশিরভাগই কাদরীর উত্তরসূরি ‘

অর্থকষ্টের জন্য অনেক সময় মেকআপ কিট কেনাও অসম্ভব হয়ে পড়ে তাঁদের জন্য। সময়ের সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব। উন্নত বিশ্বে উন্নত প্রযুক্তিতে কে আপ করা হচ্ছে আর্টিস্টদের। সেখানে যোজন যোজন পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। পর্দাতেও তা স্পষ্ট। সিনেমার অতি গুরুত্বপূর্ণ এ পেশার যত্ন না নিলে ইন্ডাস্ট্রি অনেকটা পিছিয়ে পড়বে বলা যায়।

বহি:বিশ্বের চলচ্চিত্রে মেকআপ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাংলা সিনেমার বয়স এতবছর হলেও গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি খুব বেশি গুরুত্ব পায়নি। কয়েকজন মেকআপ আর্টিষ্ট এর সাথে যোগাযোগ করে জানা গেছে। তাদের আসলে খুব বেশি কিছু করার থাকে না। শুধু ফর্সা করার জন্য যা করার দরকার তা করে থাকেন। বাহিরের দেশগুলোতে নানা রকম চরিত্র সৃষ্টি করা হয়। যারজন্য মেকআপ জরুরি। তা আসলে এখানে হয় না। যেহেতু এখানে এর চাহিদা কম। তাই মেকআপ আর্টিষ্টদের অর্থনৈতিক ক্ষরায়ও পড়তে হয় নানা সময়।

বাংলা অনেক সিনেমাই আপনার কাছে শুধু খারাপ নয়, বিরক্তির কারণ হবে অতিমাত্রায় মেকআপ। শিক্ষিত মেকআপ আর্টিস্টদের যেমন দরকার। তেমনি তাদের পরিচর্যাও দরকার। এদেশে মেকআপ প্রশিক্ষনের জন্যও নেই কোন ব্যবস্থা। তাহলে তাদের দিয়ে ভালো কিছু কীভাবে আশা করা সম্ভব! বাংলাদেশের প্রায় সবাই দেখে দেখে শিখেছেন। তাইতো নেই নতুন কোন ভাবনা। পরিচালকরাও দেখাতে চান না মেকআপের খেলা। যদিও কিছু হয়, বড় বাজেটের সিনেমার মেকআপ ম্যান ভারত থেকে আসেন। ‘আয়নাবাজি’ তার অন্যতম উদাহরণ।

Check Also

আমি নায়িকা ছিলাম, নায়িকা হয়েই মরবো: নূতন

ঢাকাই সিনেমার সোনালি যুগের জনপ্রিয় অভিনেত্রী নূতন। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে মূল থেকে পার্শ্ব চরিত্র; তিন শতাধিক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *