





যখন রাস্তায় দিয়ে হেঁটে যাই তখন মানুষজন আমাকে দেখে বলে ‘আপনি কাসেম টিভির রিপোর্টার না?’






কিংবা গাড়িতে যখন যাই তখন কৌতূহলীরা বলে ‘দেখ দেখ কাসেম টিভির সাংবাদিক যাচ্ছে।’






আমাকে মানুষজন অভিনেতার চেয়ে ‘কাসেম টিভির রিপোর্টার’ হিসেবেই বেশি চেনে।






কথাগুলো বলছিলেন জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদির অভিনেতা শুভাশীষ ভৌমিক। ইত্যাদির অন্যতম একটি সেগমেন্ট ‘কাসেম টিভি’র প্রতিবেদনের মাধ্যমে তিনি সারা দেশের মানুষের নিকট ব্যাপকভাবে পরিচিত। ১৯৯৬ সালে ইত্যাদির সাথে যুক্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানটির সাথে রয়েছেন।
শুভাশীষ ভৌমিক বলেন, ‘একটা ভার্চুয়াল টিভি মানুষ এত ব্যাপকভাবে গ্রহণ করেছে এটা ভেবেই অবাক হই। যে টিভির অস্তিত্ব নেই অথচ প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে সেটা এত পরিচিতি পেয়ে যাবে ভাবলেই অবাক লাগে। তবে দর্শকদের, ভক্তদের এই সম্বোধনে আমি মোটেও বিরক্ত হই না। বরঞ্চ ভালো লাগে আমার।’
ইত্যাদির মাধ্যমেও পরিচিত হলেও হুমায়ূন আহমেদের ‘বিবাহ’ নামের ঈদের একটি নাটকের মাধ্যমে টেলিভিশনে প্রথম অভিনয় করেন। এরপর থেকে অভিনয় করেছেন দুই শ’র অধিক প্যাকেজ নাটকে। ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করেছেন এক হাজারেরও বেশি। ‘ভূবন মাঝি’, ‘গেরিলা’, ‘জনম দুখী’, ‘এইম ইন লাইফ’সহ একাধিক চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন এই গুণী অভিনেতা।
শুভাশীষ ভৌমিকের অভিনয়ের যাত্রাটা শুরু হয়েছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে। ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগে অধ্যয়নকালীন বন্ধুর বড় ভাই হিসেবে পরিচয় ঘটে নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের সাথে। তাঁর অধীনে একটি কর্মশালাতেও অংশ নেন। ১৯৮০ সালে জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ছিলেন শুভাশীষ ভৌমিক। এরপর ১৯৮৩ সালে যুক্ত হন ঢাকা থিয়েটারে। এখনো ঢাকা থিয়েটারের সাথে যুক্ত রয়েছেন তিনি।
১৯৯৬ সালে ইত্যাদির সাথে যুক্ত হলেও হানিফ সংকেতের সাথে পরিচয়ের সূত্রটা ছিল অনেক আগের। শুভাশীষ ভৌমিক বলেন, ‘আফজাল হোসেনের উপস্থাপনায়
‘ঈদ আনন্দমেলা’য় একটি সেগমেন্ট ছিল যেখানে বিখ্যাতদের উপস্থাপনা অনুকরণ করা হতো। সেটাতে গাজী শামসুর রহমান, রুনা লায়লা, সৈয়দ শামসুল হকের মতো খ্যাতিমানদের অনুকরণ করি আমি। সেটার শুটিংয়ের পর হানিফ সংকেত আমার সাথে দেখা করে বলেন, ভালো হয়েছে। আমাকে আমন্ত্রণ জানালেন তার বাসায়। সেটা ১৯৮৪ সালের ঘটনা। সেই থেকে তার সাথে পরিচয়।’
শুভাশীষ বলেন, হানিফ সংকেত তখন স্পার্সো’তে চাকরি করতেন। আমার বাসা ছিল শ্যামলিতে দেখা যেত প্রায় হাঁটতে হাঁটতে তার অফিসে চলে যেতাম। এভাবেই তাঁর সাথে আমার সখ্য গড়ে ওঠে। আমি তাঁকে রেসপেক্ট করি, তিনি আমাকে স্নেহ করেন। একসময় তিনি দেশের বাইরে চলে যান, আর আমিও গ্রামীণ ব্যাংকের চাকরি সূত্রে রাজশাহীতে চলে যাই।
১৯৯৬ সালে যখন ফিরে আসি, তখন আবার দেখা হয় হানিফ সংকেতের সাথে। তিনি আমাকে ইত্যাদিতে অংশ নিতে বলেন, এভাবেই ইত্যাদির সাথে আমার যুক্ত হওয়া।
বাবা সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হলেও শুভাশীষ বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে ঝুঁকে পড়েন অভিনয়ের দিকে। বাবার চাকরিসূত্রে সারা বাংলাদেশ ঘুরে বেড়িয়েছেন শুভাশীষ ভৌমিক। বাবা সুভাষ চন্দ্র ভৌমিক ছিলেন সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। যখন অবসর নেন তখন তিনি অতিরিক্ত উপকমিশনার। এর আগে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরিচালক ছিলেন বাবা সুভাষ চন্দ্র। ২০১৩ সালে বাবা মারা যান।
১৯৮৩ সালের আগস্ট থেকে ঢাকা থিয়েটারের সাথে যুক্ত থেকে অন্তত ৩০০ মঞ্চের প্রদর্শনীতে অংশ নেন শুভাশীষ ভৌমিক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রযোজনা হচ্ছে ‘মুনতাসির ফ্যান্টাসি’, ‘কীর্ত্তণখোলা’, ‘কেরামত মঙ্গল’, ‘ধূর্ত উই।’ এখনো ঢাকা থিয়েটারের সাথে যুক্ত রয়েছেন তিনি।
পারিবারিক জীবনে সুখী শুভাশীষ ভৌমিকের স্ত্রী অঙ্গনা ভৌমিক সব সময় পাশে থেকে সমর্থন দিয়েছেন। বড় ছেলে শুভজিৎ ভৌমিক অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে মাস্টার্স অফ প্রফেশনাল অ্যাকাউন্টিং বিষয়ে পড়াশোনা করছেন। ছোট ছেলে সর্বজিৎ ইন্টারমিডিয়েট পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির অপেক্ষায় রয়েছেন।
পেশাগত জীবনে অভিনয়ের পাশাপাশি একটি দেশীয় পোশাক প্রতিষ্ঠান রয়েছে শুভাশীষ ভৌমিকের। তিনি বলেন, ২০০১ সালে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে অবসর নেওয়ার পর বন্ধুরা মিলে এই পোশাকের প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলি। পাশাপাশি অভিনয় চালিয়ে যাচ্ছি।