Home / মিডিয়া নিউজ / ৭৪টি সিনেমায় জুটি ছিলেন ওয়াসিম রোজিনা

৭৪টি সিনেমায় জুটি ছিলেন ওয়াসিম রোজিনা

ঢাকাই সিনেমার তিলোত্তমা নায়িকা রোজিনা। নায়ক রাজ রাজ্জাক থেকে শুরু করে ইলিয়াস কাঞ্চন

পর্যন্ত সমসাময়িক প্রায় সব নায়কের নায়িকা হয়েছেন রাজবাড়ীর মেয়ে এ অভিনেত্রী।তবে ক্যারিয়ারে

সর্বাধিক সিনেমায় জুটি বেঁধেছেন তিনি সদ্য প্রয়াত ওয়াসিমের সঙ্গে৷ আজ জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে

গেলে কথা প্রসঙ্গে এ তথ্য জানিয়েছেন রোজিনা৷ সেইসঙ্গে স্মৃতিকাতর হয়ে ওয়াসিমকে স্মরণ করলেন ভালোবাসায়, শ্রদ্ধায়।

ফোনের আওয়াজে মিশে ছিলো আবেগ, প্রিয়জন হারানোর ভারী বিষাদ।রোজিনা বলেন, ‘উনার সঙ্গে যখন আমার কাজ করার সুযোগ হলো তখন তিনি সুপারস্টার। তার সঙ্গে অভিনয় করা একজন নায়িকার জন্য ছিল স্বপ্নের মতো। আর আমি ছিলাম নবাগত নায়িকা। সৌভাগ্যে ছিলো বলেই তার নায়িকা হয়ে সিনেমায় অভিষিক্ত হতে পেরেছি।’

‘রাজমহল’ সিনেমায় ওয়াসিমের বিপরীতে নায়িকা হয়ে প্রথম চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন রোজিনা। এটি অবশ্য মুক্তি পায় রোজিনার কয়েকটি সিনেমা মুক্তির পর। সে ছবি সুপারডুপার হিট হয়। এই বিষয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে রোজিনা বলেন, ‘জীবনের প্রথম সিনেমা। শুটিংয়ের আগের রাতে চোখে ঘুম নেই। কী হয় কী হয় এই ভেবে! এফডিসির ৪ নম্বর ফ্লোরে শুটিং হবে। আমি অনেক সকালেই সেটে উপস্থিত। তার কিছুক্ষণ পর এলেন তিনি।আমার বুক ধুকধুক হওয়া শুরু হলো। কিন্তু আসার পরে কথা বলার সময়, শুটিংয়ে বুঝতেই দেননি একজন সুপারস্টার নায়ক তিনি। সবকিছু সহজ করে নিয়েছিলেন। কোনো অহংকার দেখিনি তার মধ্যে।’

প্রথম সিনেমা হিট করার পর আর পেছনে ফিরে দেখতে হয়নি। ওয়াসিম-রোজিনা জুটি হয়ে গেল দর্শকের প্রথম পছন্দ। আ্যাকশন, ফ্যান্টাসি, রোমান্টিক, সামাজিক সব ধরনের সিনেমায় তাদের চাহিদা ছিল। রাজমহল ছাড়াও মানসী, বিনি সুতার মালা, ভাগ্যলিপি, মায়ের আঁচলসহ ৭৪টি সিনেমায় দেখা গেছে তাদের।তিনি আরও বলেন, ‘শুটিংয়ের বাইরে কোথাও আড্ডা দিতে যেতে দেখিনি ওয়াসিম ভাইকে। আমরা অনেকেই যেমন একজন অন্যজনের বাসায় যেতাম, পার্টি করতাম। যেমন রাজ্জাক ভাই, ফারুক ভাই, সোহেল রানা, আলমগীর ভাই, ববিতা আপা, সুজাতা আপাসহ অনেকের বাড়িতে যেতাম। বিভিন্ন পার্টিতে নিয়মিত উপস্থিত থাকতাম। কিন্তু ওয়াসিম ভাই সবকিছু থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতেন। শুটিং আর বাসা ছাড়া কোথাও যেতে দেখিনি তাকে।

নিয়ম মেনে চলতেন। শরীরের প্রতি যত্নবান ছিলেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন৷ কখনো মদের ধারে কাছে যাননি। প্রকাশ্যে সিগারেট খেতে দেখিনি।’এ অভিনেত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের জুটির সিনেমার গান এই প্রজন্মের অনেকেরই প্রিয়। যেমন ‘এই মন তোমাকে দিলাম’। এ গানটা নতুন প্রজন্মের কাছে আজও দেখি দারুণ ভালোলাগার। অনেকেই নতুন করে গেয়েছে৷ এছাড়াও কিছু গান আছে যা দর্শক আজও ভালোবেসে গেয়ে বেড়ান। এসব গান, সিনেমা দিয়েই আজীবন অমর হয়ে থাকবেন ওয়াসিম ভাই।’

সুপারস্টার ওয়াসিমের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার না পাওয়া বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে৷ ওয়াসিমের অনেক অনুরাগীই এ নিয়ে আক্ষেপ করছেন। এ প্রসঙ্গে রোজিনা বলেন, ‘এটা সত্যি মন খারাপ করার মতোই ঘটনা। তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাননি। পুরস্কার না পেলেও অনেক জনপ্রিয়তা, মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন তিনি। হয়তো আজীবন সম্মাননা পুরস্কার পাবেন ওয়াসিম ভাই। তবে দেরি হয়ে গেল খুব। তিনি মারা গেলেন।

আসলে একটা বিষয় লক্ষ করেছি৷ আমাদের মিডিয়া সে অর্থে সাপোর্ট দেননি ওয়াসিম ভাইকে। একজন সুপারস্টার নায়ককে কত সহজেই ভুলে গেছি আমরা। তার মেয়ের মৃত্যুর পর নিজেকে সবকিছু থেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন। আর কিছু অভিমান তো থাকেই মানুষের। মানুষতো! এসব কারণেই আর সিনেমায় আসেননি৷’

‘ওয়াসিম ভাইয়ের সাথে ‘শিল্পী সমিতির নির্বাচনে ২০১৯ সালের ২৫ অক্টোবর শেষ দেখা হয়েছিল এফডিসিতে। অনেক বিষয়ে আলোচনা করেছিলাম সেদিন। তার বাসায় যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু যাওয়া হয়নি। তারপরে একবার মাত্র ফোনে কথা হয়েছিল শিল্পী সমিতির পিকনিকে যাওয়ার বিষয়ে। যেতে রাজী হননি। তারপর আর কথা হয়নি ওয়াসিম ভাইয়ের সাথে। এখনতো চলেই গেলেন। মনটা অসম্ভব খারাপ হয়ে আছে তার বিদায়ে। আমার সিনেমার প্রথম নায়ক, সবচেয়ে বেশি সিনেমার নায়ক, তাকে ভোলা কি যায়! কোনোদিন ভুলবো না৷ ওয়াসিম ভাইকে আল্লাহ বেহেস্ত দান করুন’- শেষ বেলায় যোগ করেন রোজিনা।

Check Also

আমি নায়িকা ছিলাম, নায়িকা হয়েই মরবো: নূতন

ঢাকাই সিনেমার সোনালি যুগের জনপ্রিয় অভিনেত্রী নূতন। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে মূল থেকে পার্শ্ব চরিত্র; তিন শতাধিক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *