Home / মিডিয়া নিউজ / অভিনেত্রী নাসরিনের জীবনের করুণ কাহিনী জানলে আপনার চোখেও পানি চলে আসবে

অভিনেত্রী নাসরিনের জীবনের করুণ কাহিনী জানলে আপনার চোখেও পানি চলে আসবে

অভিনেত্রী নাসরিনের জীবনের করুণ কাহিনী জানলে আপনার চোখেও পানি চলে আসবে। নাসরিনের জীবনের

করুণ কাহিনী- বাবা-মা, পাঁচ বোন আর এক ভাই নিয়ে সুখের জীবন আমাদের। পাঁচ বোনের মধ্যে

আমি সবার ছোট। আমার ছোট ছিল একমাত্র ভাই। কিন্তু সুখটা বেশিদিন স্থায়ী হলো না। আমার বসয় যখন দশ তখন মারা যান মা।

এর তিন বছর পর বাবাকে হারাই। বাবার চাকুরীর টাকা দিয়ে চলত আমাদের সংসার। মা-বাবাহীন অসহায় হয়ে পড়ি আমরা। এত বড় সংসার কিভাবে চলবে তা ভেবে কুলকিনারা পাচ্ছিলাম না।

হাসিনা নামে এক ভাড়াটিয়া ছিল আমাদের। সে নাচ গান করত। স্টেজ পারফর্ম করতে লম্বা ট্যুরে বিদেশ যেত। একদিনের ঘটনা। সেজে গুজে রেডি হচ্ছে সে। আগ বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করি-আপু তুমি কোথায় যাবা? সে বলে, এফডিসিতে যাবে। এফডিসি কি তখনও আমি জানি না।

প্রশ্ন করি-এফডিসি কি? উত্তরে তিনি বলেন, যেখানে নায়ক নায়িকারা শুটিং করেন। আমি বলি- আমাকে তোমার সঙ্গে নিবা? আমাকে সঙ্গে নিলে আমার বড় বোন বকা দিতে পারে এই ভয়ে সে আমাকে নিতে অনিহা প্রকাশ করে।

আমি তাকে বলি- আমি তোমার সঙ্গে গেছি এ কথা আমার বোন কখনও জানতে পারবে না। আমি তোমার সঙ্গে লুকিয়ে যাব। আমাকে সে তার সঙ্গে নিয়েই এফডিসিতে যায়।

এফডিসির পুরনো গেট। যারা পুরনো তারাই একমাত্র জানেন সে গেটের কথা। আজ সবাই যে গেট দিয়ে ঢোকেন, এটা ছিল না তখন। তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ডের ঘিঞ্চি এড়িয়ে নানা ঝক্কি সামলিয়ে তবেই না এফডিসির গেট। হাসিনা আমাকে নিয়ে সে গেটের সামনে এসে হাজির হয়।

দেখলাম সবাই তাকে চিনে, নানাজন তার সাথে কুশল বিনিময় করে। আমাকে নিয়ে ঢুকতে গিয়ে দারোয়ানের বাধার মুখে পড়ে। আমাকে দেখেই তারা বুঝতে পারে আমি নতুন। কি আর করা, হাসিনা আমাকে একটি রুমে বসিয়ে বলে, তুমি এখানে বসে থাক আমি একটু পরেই চলে আসব।

হাসিনার ফেরার নাম গন্ধ নেই। আমি তো এখানে নতুন। কাউকে চিনি না। তার জন্য বসেই থাকি। পরে জেনেছি, এটা এক্সট্রা শিল্পীদের ওয়েটিং রুম। শুটিংয়ের জন্য কাউকে দরকার হলে এখান থেকেই নিয়ে যাওয়া হয়।

একজন এসে আমাকে বলেন, এই মেয়ে তুমি শুটিং করবা? আমি কিছুই বুঝি না। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকি। তিনি আমাকে হাত ধরে ভিতরে নিয়ে যান। নক করতেই খুলে যায় দরজা।

তিনি আমাকে নিয়ে সেই ঘরের মধ্যে ঢুকে যান। আমি ভয় পেয়ে যাই। দেখি পুরো ঘর অন্ধকার। আমি চিৎকার করে উঠি। সঙ্গে সঙ্গে আলো জ্বলে ওঠে। তিনি ধমক দিয়ে বলেন, এই বাবু চুপ করো, দেখো না এখানে ডাবিং হচ্ছে।

আলো জ্বলে ওঠার পরই দেখি রুমে আরো মানুষ আছে। চোখের সামনে সিনেমার মতো পর্দায় সাড়া শব্দহীন ছবি নড়াচড়া করে। আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি। কিছুক্ষণ পর কলা, সিঙ্গারা খেতে দেওয়া হয় আমাকে। এরপর তিনি বলেন, ঐ মাইকের সামনে গিয়া তুমি ডাবিং করবা।

কারো ওপর নির্যাতন হলে যেমনটি করেন ঠিক তেমন। আমিও মাইকের সামনে গিয়ে তাদের শিখিয়ে দেওয়া বুলি আউড়াই। ডাবিং শেষ হয়। আমি চলে আসব-এমন সময় আমাকে ১০০ টাকা দিতে উদ্যত হন। আমি সে টাকা নেওয়ার সাহস পাই না। তাকে বলি, ভাই আমাকে কলা সিঙ্গারা দিয়েছেন আমি এতেই খুশি।

টাকা নেব না। তিনি এক রকম জোর করেই আমার হাতে টাকাটা গুজে দেন। এটাই চলচ্চিত্রে আমার প্রথম ইনকাম। যিনি আমাকে প্রথম কাজ করালেন পরে জানলাম তিনি নজরুল ভাই। ফখরুল হাসান বৈরাগী ভাইয়ের প্রোডাকশন ম্যানেজার।

পরে পরিচয় হয় চান ভাইয়ের সঙ্গে। তিনি ছিলেন সোহানুর রহমান সোহান ভাইয়ের প্রোডাকশন ম্যানেজার। তিনি আমাকে বলেন, এই মেয়ে তুমি শুটিং করবা? কাল কাপড় চোপর নিয়ে এফডিসিতে আসতে পারবা? আমি সায় দিই। পরের দিন নির্দিষ্ট সময়ে গিয়ে হাজির হই এফডিসিতে।

চান ভাই আমাকে গুলশান, উত্তরা না ধানমন্ডি- কোথায় যে নিয়ে গিয়েছিলেন আজ তা বলতে পারব না। তিনি আমাকে নিয়ে যেখানে হাজির হন সেখানকার কাউকে আমি চিনি না। শুধু একজনকে চেনা চেনা লাগে। মনে পড়ে বড় বোন আমাকে সিনেমা হলে ছবি দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলেন।

তাকে দেখে ভালো লাগে আমার। চান ভাই বলেন, তিনি ওমর সানি। সিনেমার নায়ক। তাকে তুমি চেনো? বিদগুটে চেহারার আরও একজন। মাথা ভর্তি ঝাকড়া চুল,চোখ দুটো বড় বড়। তাকে দেখে ভয় পেয়ে যাই। চান ভাই বলেন, আরে বাবু, ভয়ের কিছু নেই। উনি কাবিলা, অভিনয় করেন। আজ তার সঙ্গেই তোমাকে অভিনয় করতে হবে।

Check Also

আমি নায়িকা ছিলাম, নায়িকা হয়েই মরবো: নূতন

ঢাকাই সিনেমার সোনালি যুগের জনপ্রিয় অভিনেত্রী নূতন। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে মূল থেকে পার্শ্ব চরিত্র; তিন শতাধিক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *