





বৈমানিক স্ত্রীর সঙ্গে এক যুগের সংসার নায়ক ফেরদৌসের। গতকাল শুক্রবার ছিল তাঁদের বিয়ের যুগপূর্তি।






ইদানীং চারপাশে শুধু ভাঙনের খবর। নায়ক-নায়িকা, অভিনেতা-অভিনেত্রী কিংবা গায়ক-গায়িকার






সংসার ভাঙার খবর শুনতে শুনতে মানুষ যখন ক্লান্ত, সেই সময়ে ফেরদৌস-তানিয়ার ১২টি






বছর একসঙ্গে থাকার খবর অনেক আনন্দ দেয়। আজ শনিবার দুপুরে ফেরদৌস শোনালেন তাঁর সংসারের যুগপূর্তির গল্প।
নায়ক-বৈমানিকের শুভ পরিণয়
২০০৪ সালের ৯ ডিসেম্বর বৈমানিক তানিয়ার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন দুই বাংলার জনপ্রিয় নায়ক ফেরদৌস।
তাঁদের ঘরজুড়ে এখন ছোটাছুটি করে দুই মেয়ে নুযহাত ও নামিরা। নুযহাত ভালো রান্নাও করতে শিখেছে। ফেরদৌস বলেন, ‘আমরা দুজনেই নিজেদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকি। কেউ কারও ওপর নির্ভরশীল নই, আবার অনেক বেশি নির্ভরশীল। সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমরা দুজন যে বিষয়টার দিকে গুরুত্ব দিই, তা হচ্ছে বিশ্বাস। একজন আরেকজনকে বিশ্বাস করি। আমি যে অঙ্গনে কাজ করি, আমাকে সারাক্ষণই নায়িকা কিংবা সহশিল্পীদের সঙ্গে সময় কাটাতে হয়। এ ক্ষেত্রে সে (তানিয়া) যদি আমাকে বিশ্বাস না করত, আমি ঠিকমতো কাজই করতে পারতাম না।’
আজ এ দেশে কাল আরেক দেশে
‘ফেরদৌসের স্ত্রী তানিয়া আহমেদ বাংলাদেশ বিমানের পাইলট। পেশাগত ব্যস্ততার কারণে আজ এ দেশে তো কাল আরেক দেশে।
এভাবেই কেটে গেছে একটি যুগ। বিমান যেমন বাতাসে ভেসে এগিয়ে চলে, তেমনি বিশ্বাসের ওপর ভেসে এগিয়ে গেছে দুজনের সংসার। একজন মানুষ আনন্দ নিয়ে কাজ করতে না পারলে, সফল হতে পারে না। যে মানুষ তাঁর পেশায় ব্যর্থ, সে প্রায় সব কাজেই ব্যর্থ হয়। এত দিনের অভিজ্ঞতা থেকেই এটা মনে হয়েছে। আমি যখন কর্মক্ষেত্রে অসফল হব, তখন ব্যক্তিজীবনের নানা ক্ষেত্রেও নানাভাবে অসফল হব। আর সাফল্য অর্জনের ক্ষেত্রে জীবনসঙ্গীর ভূমিকাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’
ফেরদৌসের অভিনয়জীবনে ছিল অনেক চড়াই-উতরাই। সেই সময়গুলোতে স্ত্রী তাঁকে সমর্থন জুগিয়েছেন। একবার কী কারণে যেন অভিনয়ের ওপর খানিকটা মন খারাপ হয়েছিল। তখন তানিয়া বলেছিলেন, ‘চাইলে তুমি অভিনয় ছেড়ে দিতে পারো। আমি তোমার সঙ্গে আছি।’ স্ত্রীর কাছ থেকে এমন সমর্থন পাওয়াটাও একটা বড় ব্যাপার বলে মনে করেন ফেরদৌস।
পাশে থাকার ইতিবৃত্ত
ফেরদৌস বলেন, ‘ধরা যাক আমার একটা সিনেমা ফ্লপ যাচ্ছে।
এটার জন্য পরিবারকে দোষারোপ না করে কীভাবে এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠা যায়, সেটাই খুঁজে বের করতে চেষ্টা করি। সঙ্গিনীর সঙ্গে কাজের ব্যাপারগুলো শেয়ার করি। সারাক্ষণ কী হচ্ছে, এগুলো নিয়ে আলোচনা করি না। আমার কিছু পেশাগত ঝামেলা আছে, ওরও আছে। এসব সারাক্ষণ বলাবলি করার কোনো মানে হয় না। যেসব বিষয় নিজেদের মধ্যে শেয়ার না করলেই নয়, শুধু সেগুলোই করি। টেনশনগুলো তাঁকে দেওয়া ঠিক না। সম্পর্কের মধ্যে সুস্থতা ও সৌন্দর্য থাকার দরকার আছে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে টক-ঝাল-মিষ্টি সম্পর্ক থাকবে। একেবারে মিষ্টি হলে ডায়াবেটিস হয়ে যাবে, ঝাল বেশি হলে বিড়ম্বনা বাড়বে। আমাদের মধ্যেও কিন্তু ঝগড়া-ঝাঁটি হয়। মান-অভিমানও হয়।’
সপরিবারে ফেরদৌসসন্তানেরা সেতুর মতো
‘আমাদের দুই সন্তান নুযহাত ও নামীরা সম্পর্কটাকে আরও দৃঢ় করেছে। সময়মতো মা-বাবা হওয়াও জরুরি। সন্তানের মাধ্যমে মা-বাবা স্বয়ংসম্পূর্ণ হন। ওরা না থাকলে আমাদের সম্পর্কটা হয়তো আরও বোরিং হতো। ওরা আমাদের আরও কাছে নিয়ে এসেছে। আমরা কিন্তু বিবাহবার্ষিকী পালন করতাম না। নুযহাত-নামীরার জন্য করতে হয়েছে। সন্তানেরা একটা সময় বাবা-মায়ের জীবনটাকে অনেক আনন্দময় করে তোলে। তখন মনে হয়, বেঁচে থাকার আনন্দটা অসীম।’
সময় পেলেই ঘুরতে বের হয়ে যান ফেরদৌস ও তানিয়া। ব্যস্ত জীবনে সময় পাওয়া মাত্রই পরিবারকে নিয়ে কোথাও নিজের মতো করে ঘুরতে যাওয়া উচিত।
ফেরদৌস বলেন, ‘আমরা তো বছরের শুরুতেই বাচ্চাদের ছুটিগুলো পেয়ে যাই। বাচ্চাদের ছুটির সঙ্গে জুড়ে নিই নিজেদের ছুটি। জুন-জুলাইয়ে একটা লম্বা ছুটি নিয়ে ২০-২৫ দিনের জন্য আমরা বেড়াতে চলে যাই। ওই সময়গুলো কোনো কাজ রাখি না। সাধারণ মানুষের মতো থাকতে চাই। আমার মেয়েদের কখনোই বুঝতে দিই না যে আমি নায়ক। আজও যেমন বাচ্চাদের নিয়ে মাঠে এসেছি, তখন অনেক অভিভাবক আমাকে বলছেন, আপনার বাচ্চাদের দেখে মনে হয় না, তারা “স্টার কিড”। ওদের কখনো এই অনুভূতি হোক, তা আমি চাই না। আমি মনে করি, অভিনয় আমার চাকরি। আমি যখন ঢাকায় থাকি, প্রত্যেক সপ্তাহে ওদের স্কুলে নিয়ে যাই, না হয় নিয়ে আসি। যাতে ওরা বিচ্ছিন্ন বোধ না করে।’ ফেরদৌস বলেন, ‘আমি অনেক কষ্ট করে অভিনেতা হয়েছি। আমার মা-বাবাও আমাকে আর দশজন সাধারণ সন্তানের মতোই মানুষ করেছেন। আমার মনে হয়, এই বেড়ে ওঠা একজন প্রকৃত মানুষের জন্য খুব প্রয়োজন।’
সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার গোপন রহস্য
‘একবাক্যে যদি বলি, সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে বন্ধুত্বটা খুব জরুরি। বন্ধুত্বের মধ্যে বিশ্বাস, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, সম্মান, সবকিছুই আছে। পৃথিবীতে একটাই সম্পর্ক আছে যেটা রক্তের সম্পর্ক নয়, কিন্তু তার থেকেও বেশি। অসাধারণ একটা ব্যাপার। সম্পর্কটা যতটা বন্ধুত্বপূর্ণ হবে, ততই ভালো হবে।’-প্রথম আলো