





পত্রিকার দফতরে ‘কহানি টু’র প্রচারে পরিচালক সুজয় ঘোষ আর তাঁর প্রিয় অভিনেত্রী বিদ্যা বালন।






দেড় বছর কথা বলেননি একে অপরের সঙ্গে! সেটা পুষিয়ে নিয়েছেন টানা শ্যুটে, আড্ডায়, প্রমোশনে।






তাই দু’জন এক ছাদের নীচে থাকলেও, তাঁদের ধরা গেল আলাদা করেই। যদিও ইন্টারভিউ শুরু হতে






বোঝা গেল, দু’জনেরই কান কিন্তু অন্যজনের সাক্ষাৎকারে!






সুজয়ের সঙ্গে প্যাচ-আপ’টা হল কীভাবে?
আমি একটা কফিশপে ওকে দেখেছিলাম একদিন। হঠাৎ করেই। ও আমার দিকে পিছন ঘুরে ছিল। আমি যে এসেছি, সেটা জানান দিতে ওর পিঠে একটা চাপড় মেরেছিলাম। ঘুরে তাকাতে বললাম, চিনতে পারছ? আমরা একসঙ্গে কাজ করেছিলাম…? ও তখন বলল, ‘ও হ্যাঁ, তুমিই তো সেই প্রেগন্যান্ট মহিলা তাই না’? তারপর দশ মিনিটের মধ্যেই আবার পুরনো দিনের মতো আড্ডায় মেতে গিয়েছিলাম! এটাও প্রায় এক বছর আগের গল্প। তার আগে দেড় বছর আমাদের কথা বন্ধ ছিল।
এত লম্বা সময় ধরে কথা বন্ধ থাকাটা পেশাদারিত্বের পক্ষে ক্ষতিকারক নয়?
ঝামেলাটা তো লেগেছিল আমার স্ক্রিপ্ট পছন্দ হচ্ছিল না বলে। সুজয় ‘কহানি’র পর যতগুলো স্ক্রিপ্ট এনেছিল, কোনওটাই জমছিল বলে মনে হয়নি। তারপর ‘দুর্গা রানি সিংহ’এর স্ক্রিপ্ট নিয়ে আসে ও। এই ছবির গল্পটা ভাল লেগেছিল। কিন্তু তখনই আমি অসুস্থ হয়ে পড়লাম। তারপর সুজয়ও রেগে গেল! সেখান থেকেই কথা বন্ধ হওয়ার ব্যাপারটা। তবে আমরা বরাবরই জানতাম, ফেজটা কেটে যাবে। না হলে ‘কস্টা কফি’তে আমি গিয়ে ওর পিঠে চাপ়়ড় মারি!
এবার কি ‘কহানি থ্রি’এর প্ল্যানটাও করে নিচ্ছেন?
হা হা! এটা সুজয়কেই বলতে হবে। ‘কহানি’ সিরিজের যোগ্য কিছু না ভাবতে পারলে বানিয়ে তো লাভ নেই, তাই না? এই গল্পটাও যখন আমাকে বলেছিল, ওকে বলেছিলাম ছবির নাম ‘কহানি টু’ কেন, অন্য কিছুও তো হতে পারে। এটা তো সিক্যুয়েল নয়! ও তখন আমাকে গল্পটা পড়ে দেখতে বলল। পড়ে বুঝলাম, ছবিটায় এমন একটা ফ্লেভার আছে, যেটা ‘কহানি টু’ হওয়ার দম রাখে।
সিরিজ ফিল্ম বলিউডে যা আছে, তাতে মোদ্দা চরিত্রগুলো একরকমই থাকে। কিন্তু এখানে বিদ্যা বালন থাকলেও চরিত্রটা আলাদা। দর্শকের রিলেট করতে অসুবিধে হবে বলে মনে করেন?
এখনও পর্যন্ত যা রেসপন্স পেয়েছি, তাতে তো মনে হয় না অসুবিধে হবে। খুবই পছন্দ করেছেন সকলে ট্রেলার-টিজার সব। ওগুলো বেরনোর আগে পর্যন্ত হয়তো জল্পনা ছিল, কী হবে না হবে তা নিয়ে। ছবিটা দেখলে বোঝা যাবে ‘কহানি’ কেন এই ছবিরও নাম হল।
আপনি বলেছিলেন, অর্জুন রামপালের হাসি নাকি সংক্রামক। সুজয়ের সঙ্গে আপনার মজার ‘রেপার্টে’ তো অজানা নয় কারও। সেট’এ কি প্রচুর হাসাহাসি করতেন আপনারা?
আমি আসলে এমনিই ভীষণ হাসি! অর্জুনকেও দেখি, খুব হাসে! কখনও কখনও এমনও হয়েছে, ও হয়তো অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে আছে। আমিই তখন গিয়ে ওকে খোঁচাই! তারপর দু’জনে হাসতে শুরু করি। অর্জুনের সেন্স অফ হিউমার দারুণ। প্রোমোশনে গিয়ে আরও ভাল বুঝতে পারছি। সেট’এ তো সারাক্ষণ একটা টেনশনের আবহ থাকত। তাছাড়া হয় কালিম্পংয়ের প্রবল ঠান্ডায় শ্যুট করেছি, না হয় চন্দননগরের কাঠফাটা গরমে! ফলে চাপে থাকতাম আমরা। কিন্তু প্রোমোশনে সকলে অনেক রিল্যাক্সড।
সারাক্ষণ চাপে থাকতেন? সুজয় ঘোষের সেট মানে তো ফুর্তির প্রাণ, গড়ের মাঠ!
(জোর হাসি) একদম ঠিক বলেছেন! না, না আমি আসলে সেট’এর কথা বলিনি। টেনশনের আবহ থাকত গল্পের কারণে। থ্রিলার তো! ফলে এনার্জি, ইনটেন্সিটি— সবটা বেশি। এমনিতে তো সুজয় সারাক্ষণ সোজা মুখে রসিকতা করতে থাকে! আপনি বুঝতেও পারবেন না ও সিরিয়াসলি বলছে, না ইয়ার্কি মারছে (পাশে হতে থাকা সুজয়ের সাক্ষাৎকারের দিকে নজর করে, ‘এখনও মনে হয় কিছু একটা বলছে…’)!
হ্যাঁ, বলছেন তো! সৃজিত মুখোপাধ্যায় বলেছেন, সুজয় নাকি আপনাকে উল্টোপাল্টা বাংলা শেখান?
একদমই! আর সে সব বলে-টলে সৃজিতের সামনে কেসও খেয়েছি! এখন আমি পাবলিকলি বলতে চাই, সুজয় ঘোষ আমাকে বাংলা শিখিয়েছে। ওর জন্যেই আমি বাংলা শিখেছি। ফলে উল্টোপাল্টা বাংলা, ভাল বাংলা— যা বলি, সবকিছুর জন্য ও দায়ী!
যা বলছিলেন…।
হ্যাঁ, ‘কাট’ বলার পর সুজয় একদম অন্য মানুষ! শট নেওয়া হয়ে গেলে লাফাচ্ছে-ঝাঁপাচ্ছে, ইয়ার্কি মারছে! আসলে এভাবে কাজ করতে আমারও ভাল লাগে। এনার্জি’টা ঠিকমতো ব্যবহার করা যায়। ইনটেন্সিটি শ্যুড বি রিজার্ভড ফর দ্য শট্স!
তাই কি? আপনারই তো শ্যুটের পরেও রেশ কাটে না। বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বলেছেন ইনটেন্স বা কঠিন রোল করার পর তার প্রভাব ব্যক্তিগত জীবনেও পড়ে…।
আমি আসলে ইনটেন্স অ্যাক্টর। ফলে প্রতিটা চরিত্রের জন্য আমাকে আলাদা করে অনেক এফর্ট দিতে হয়। আই গিভ আ লট টু মাই ফিল্মস। এই ছবিটার প্রভাবও পড়েছে আমার উপর। একে তো চরম আবহাওয়া, তার উপর ইমোশনাল স্ট্রেস! সবটা একসঙ্গে হলে তার একটা এফেক্ট তো পড়বেই। আর সেটা আমার মধ্যে অনেকদিন থাকেও। মনে হয়, সারাজীবনই থাকবে। প্রতিটা চরিত্রেরই কিছু না কিছু আমার মধ্যে রয়ে গিয়েছে। আর এটা হয়, কারণ আমি চরিত্রগুলোকে ভালও বেসে ফেলি। তাদের গল্পগুলো ভাবি। তাই হয়তো তাদের মতো বেঁচেও ফেলি মাঝে মাঝে! আই অ্যাম অল দিজ পিপ্ল (হাসি)।
‘বেগমজানে’র অভিজ্ঞতা বলবেন?
ওখানে যে চরিত্রটা করছি, সেটা আমাকে অনেকভাবে সাহায্য করেছে। আমার ভিতরে কিন্তু প্রচুর রাগ আছে, অ্যাংগস্ট যাকে বলে। ‘বেগমজান’ এই রাগটাকে বার করে আনতে পেরেছে। এমনিতে আমি সহজে রাগি না। মানে, বাইরের লোকেদের সামনে তো রাগ দেখাই-ই না। খুব কাছের কেউ বা পরিবার না হলে রাগ-টাগ করিও না (কথাটা শুনেই সুজয় অট্টহাসি দিলেন, বিদ্যা চোখ পাকালেন)। সুজয় ঘোষ ব্যতিক্রম!
বিদ্যা বালন’কে নরম-সরম সেনসিটিভ অভিনেত্রী বলেই লোকে জানে। যিনি আবার কো-স্টার’কে শট’এর সময় চড় মেরে পরে কাঁদেন!
আই উড বি লাইং থ্রু মাই টিথ ইফ আই সে আয়্যাম দিস সেনসিটিভ অ্যাক্টর! হা হা! আসলে আমার মনে হয়, সাধারণত হাসিমুখে কথা বললেও মেয়েরা ভিতরে ভিতরে অনেক রাগ পুষে রাখে। মানে, রোজকার জীবনের সঙ্গে মানিয়ে নিতেই ওই চেপে রাখতে শেখা। তবে জেনারেলাইজ করতে চাই না। ‘বেগমজান’ আমার ক্ষেত্রে একটা এমন চ্যানেল, যেখানে রাগটা বার করতে পেরেছি।
মেয়েদের প্রতি বৈষম্যমূলক মনোভাবের কথা অনেকবার বলেছেন আপনি। পারিশ্রমিকের ফারাক নিয়েও। সোলো-হিরোইন প্রজেক্টে কাজ করাটা কি এর একটা সমাধান হতে পারে?
তা মনে হয় না। ওটা সমাধান নয়। সব ধরনের ছবিই তো বানাতে হবে। আমি বহুদিন বৈষম্যের মুখে পড়িনি, কারণ একা-নায়িকা হয়ে বহু প্রজেক্টে কাজ করছি। আই গেট হোয়াট আই কম্যান্ড। কিন্তু তার মানে বৈষম্য উধাও হয়ে যায়নি। এখনও বিশাল ফারাক হিরো আর হিরোইনের পারিশ্রমিকে। তবে এখন অভিনেত্রীরা সকলেই সচেতন, ব্যাপারটা নিয়ে কথাও বলছেন খোলাখুলি, তাঁরাও ইন্ডাস্ট্রি চালাচ্ছেন, কমান্ডিং পজিশনে যাচ্ছেন। যদিও ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি শুধু পাল্টালে তো চলবে না, সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রেও বদলটা আসতে হবে।
সব ছবির ক্ষেত্রেই বাড়তি এফর্ট দেন বলছেন, ‘হমারি অধুরি কহানি’ বা ‘ঘনচক্কর’ ক্লিক না করলে সেই বাড়তি এফর্ট বৃথা গেল মনে হয় না?
একেবারেই না। অভিনয়টা তো আমার কাজ। সেখানে ফাঁকি দিলে চলবে কেন? আমি সব ছবি নিয়েই গর্বিত। কোনও ফিল্ম ক্লিক করল না কেন, সেটা সব সময় তো হাত গুনে বলে দেওয়া যায় না। সফল না হলে কাউকে দোষারোপ করতে পারি, ঘরে বসে কাঁদতে পারি। কিন্তু কখনওই নিশ্চিত করে বলতে পারি না, কোন ফিল্মটা ক্লিক করবে।
৫০০-১০০০ টাকা বাতিলের বাজারে ছবি চলবে কি না, তাই নিয়ে চিন্তা হচ্ছে?
এটা আমি ঠিক বলতে পারব না। ব্যাপারটা নিয়ে যে আমার খুব জ্ঞান আছে, তা নয়। অর্থনীতি বুঝিও না। লাভ-ক্ষতি কী হবে বা হবে না, সেটাও জানি না!-এবেলা