





শীলা আহমেদ, ফেসবুক থেকে :






জন্মদিন। এইতো, কয়েকদিন পরেই আমার স্বামীর জন্মদিন। আমার ১১ বছর বয়সে ওর সাথে আমার প্রথম






পরিচয় হয়। ও তখন বিচিত্রায় কাজ করতো। আমার বাবার একটা ইন্টার্ভিউ নিতে এসেছিলো।






আমাদের বাসায় আসলেই অনেক গল্প শোনাত। সেই সময় ও প্রচ-ভাবে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাথে জড়িত।






কীভাবে এই দেশকে সোনার বাংলাদেশ বানানো হবে, সেটা নিয়ে অনেক স্বপ্ন। জাহানারা ইমামের সাথে আন্দোলন করছে, মিটিং করছে, মিছিল করছে! আমি ওর বিরাট ভক্ত হয়ে গেলাম!
আমার কাছে মনে হতো, কী সাংঘাতিক দেশপ্রেমিক একজন মানুষ! সেই ১১ বছর বয়সে, ও আমার কাছে একটা হিরো হয়ে গেলো!
আমাদের পরিচয়ের ২১ বছর পর আমাদের বিয়ে হয়। আমাদের বিয়ের পর নানা কারণেই আমার আত্মীয় স্বজন কেউই খুশি হয়নি।
আমার এক আত্মীয় একদিন আমাকে ফোন করলো। খুবই মন খারাপ করে বললো ’শীলা, তুমি এমন কাজ করতে পারলে? স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তির লোককে বিয়ে করলে?’
-’কেন ’স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি’-র লোক হবে? ওর মতো দেশপ্রেমিক আমি কখনো দেখিনি! তুমি কি ওকে ২০-২১ বছর আগে থেকে চিনো না! কীভাবে এমন কথা ওকে নিয়ে বলতে পারলে?’
-’তখন দেশপ্রেমিক ছিলো, এখন আর নেই। তুমি একদিন দুঃখ করবে।’
দুঃখ অবশ্য আমি করি। ভেবেছিলাম আমি হাসিখুশি, আড্ডাবাজ, একজন মানুষকে বিয়ে করেছি! কিন্তু দেখি, বেশিরভাগ সময়ই ও খুব চুপচাপ থাকে। কথা বলে না, বাচ্চাদের সাথে খেলে না। খুবই মনমরা হয়ে যায়। আমি যদি জানতে চাই, কেনো মন খারাপ তোমার? হতাশ হয়ে আমার দিকে তাকায়। বলে, পেপার পড় নাই আজকে?
-প্রতিদিনই তো পেপার পড়ি ।
-বলো তো কেনো সাগর-রুনির হত্যার বিচার হয় না?
-এইজন্য মন খারাপ তোমার?
আবার আরেকদিন মন খারাপ করে, গুম নিয়ে। আরেকদিন ব্যাংকের টাকা পাচার নিয়ে। আরেকদিন তনুর জন্য। আরেকদিন বিশ্বজিতের জন্য। এই লিস্ট আর শেষ হয় না।
৩-৪ দিন আগে আমি বললাম, চল দুইজন বের হই, তোমার ঘড়ির বেল্ট ছিঁড়ে গিয়েছে, জন্মদিনে একটা ঘড়ি কিনে দেই। ও অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো। বললো- এই রকম একটা নির্বাচনের পর তোমার জন্মদিন-ঘড়ি এইসবের কথা মনে হয়?
হ্যাঁ, আমার তো মনে হয়ই। অনেক আনন্দ করতে ইচ্ছা করে! তোমার অনেক ভুলভ্রান্তি অনেক দোষ, সবই তো দেখলাম। ঝগড়াঝাঁটি তো কম করলাম না!
কিন্তু ১১ বছর বয়সে যে আমার মনে হয়েছিল, ’কী সাংঘাতিক দেশপ্রেমিক’, সেই মনে হওয়ার কোন পরিবর্তন হয়নি। তাই চলো সেলিব্রেট করি জন্মদিন, প্রেমের দিন, ঝগড়ার দিন, মন ভালোর দিন, মন খারাপের দিন আর আমাদের একসাথে থাকার সব দিনগুলো। বলাতো যায় না, হয়তো খুব তাড়াতাড়িই তোমার লেখালেখি বন্ধ করে দেয়া হবে, তোমার নামে কোনো মামলা হবে, তোমাকে ’স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি’র লোক বানানো হবে, অথবা তুমি গুম হয়ে যাবে! আমাদের এই সোনার বাংলাদেশে তো সবই সম্ভব!