





নব্বই এর দশকের জনপ্রিয় জুটি নাঈম ও শাবনাজ। এই জুটি নব্বই দশকে একাধিক ছবিতে অভিনয়






করেছেন। তারা ১৯৯১ সালে জুটি বেঁধে একটি ছবিতে অভিনয় করে দর্শকদের কাছে তুমুল জনপ্রিয়তা






অর্জন করেন। এই ছবিটির নাম চাঁদনী। আর এই ছবির নায়িকা শাবনাজ তার দক্ষ অভিনয়ের মাধ্যমে






দর্শকদের মাঝে ব্যাপক সারা ফেলে। তবে গত প্রায় দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে অভিনয় থেকে দূরে রয়েছে এই জনপ্রিয় নায়িকা। বর্তমানে স্বামী, সন্তান আর সংসার নিয়েই ব্যস্ত সময় পার করছেন। তিনি তার পরিবার নিয়ে ঢাকার উত্তরায় থাকছেন। এই তারকা দম্পতির দুই মেয়ে। বড় মেয়ের নাম নামিরা। সে বর্তমানে কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। আর ছোট মেয়ের নাম মাহাদিয়া। তার ছোট মেয়েরও কানাডায় যাওয়ার কথা ছিল। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে সব এলোমেল হয়ে গেছে। তবে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ছোট মেয়েকেও পাঠিয়ে দিবেন কানাডায়।
গণমাধ্যমের সাথে কথা হয় শাবনাজের। জানালেন, তাঁরা যে রোডে থাকেন, সেখানে কারও সংক্রমণের খবর পাননি। শুধু তা-ই নয়, পরিচিত এবং আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে এখনো কেউ করোনা সংক্রমিত হননি, তাই স্বস্তি। তবে দেশে করোনার যে পরিস্থিতি, তা নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন তিনি।
চলচ্চিত্রে অভিনয় ছাড়া নাটকেও অভিনয় করেছিলেন শাবনাজ। দুটো মাধ্যম থেকেই এখন আড়ালে তিনি। আড়ালে থাকা শাবনাজের হঠাৎ দেখা মেলে চলচ্চিত্র কিংবা নাটকসংশ্লিষ্ট কিছু ঘরোয়া আয়োজনে। নিজেকে এখন একেবারে অন্য এক জীবনের বাসিন্দা করে রেখেছেন, যে জীবনে সংসার, স্বামী ও সন্তান ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে চান না।
চলচ্চিত্রে কাজ করতে গিয়ে সহশিল্পী, সে সময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক নাঈমের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। কথায় কথায় জানালেন ’বিষের বাঁশি’ ছবির কাজ করতে গিয়ে দুজনের প্রেমের শুরু। আর ’লাভ’ ছবির কাজ করতে গিয়ে ভালোবাসা বাড়তে থাকে। তবে শুরুতে কেউ কাউকে নিজেদের ভালো লাগার বিষয়টি বুঝতে দিতে চাইতেন না। শাবনাজ বলেন, ’নাঈমের জন্য মেয়েরা তো অনেক পাগল ছিল। আমি বুঝতে পারতাম। তবে আমার যে ওকে ভালো লাগত, তা বুঝতে দিতাম না। দেখতে তো আমিও কম সুন্দরী ছিলাম না (হাসি)। আমিও ভাব নিয়ে থাকতাম। সে কথা না বললেও আমিও বলব না—এমনটাই ছিল হাবভাব।’
ছবিতে অভিনয়ের তিন বছরের মাথায় শাবনাজ ও নাঈম দুজনে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। ৫ অক্টোবর, ১৯৯৪ সালে তাঁরা ভালোবেসে বিয়ে করেন। বিয়ের পর দুই বছর ছবিতে অভিনয় করেন শাবনাজ। এদিকে দুজনের বিয়ের পর নাঈমের বাবা মা’রা যান। এতে ভীষণ ভেঙে পড়েন নাঈম। এই সময়টায় শাবনাজকে স্বামীর পাশে থাকতে হতো সবচেয়ে বেশি। শাবনাজ বললেন, ’সকালে ঘুম থেকে উঠেই ময়না, ময়না (শাবনাজকে ময়না বলে ডাকেন নাঈম) বলে ডাকাডাকি করে অস্থির করে ফেলত নাঈম। আমাকে ওর সামনে বসে থাকতে হতো। আমার সঙ্গটা তখন ওর বেশি দরকারও ছিল। আমরা অনেক গল্প করতাম, আড্ডা দিতাম। নাঈম কাজও কমিয়ে দেয়। আমিও হাতে থাকা কিছু ছবির কাজ করে নিজেকে গুটিয়ে নিই।’
’বিষের বাঁশি’ নামের ছবিতে শাবনাজের চরিত্রের নাম ছিল ময়না। আর এই ছবিতে অভিনয় করতে গিয়ে দুজনের প্রেমের শুরু, তাই শাবনাজকে এই নামেই ডাকা শুরু করেন নাঈম। শাবনাজ বললেন, ’যেহেতু আমাদের প্রেমের শুরু এই ছবিতে, তাই নাঈম আমাকে ওই নামে ডাকে। এখনো ওই নামে সে আমাকে ডাকে।’
১৯৯১ সালে শাবনাজের যখন বাংলা চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে, তখন তিনি মিরপুর শাহ আলী স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেছেন। মা খুব একটা পছন্দ না করলেও নাট্যকর্মী বাবা উৎসাহ দিয়েছেন। তিনি বলেছিলেন, ’যা করবে, সৎভাবে করবে, ভালোবেসে করবে।’ শাবনাজ বললেন, ’পুরান ঢাকায় আব্বার ফুফাতো বোনের গায়েহলুদের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। আব্বার ফুফার খুব ভালো বন্ধু ছিলেন এহতেশাম সাহেব। বিয়ের চার মাস পর ওই অনুষ্ঠানেরই ভিডিওতে এহতেশাম সাহেব আমাকে দেখেন। পছন্দ করেন। তাঁর ছবির নায়িকা বানানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেন। বাবাকে তিনি বললেন আমাকে “চাঁদনী” ছবির নায়িকা করতে চান। বাবা যেহেতু মঞ্চনাটকের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাই তিনি না করলেন না।’
স্কুলে পড়ার সময় শাবনাজও পাশাপাশি ভিন্ন কিছু মনে মনে খুঁজছিলেন। স্কুলে অঙ্ক ছাড়া কোনো বিষয় তাঁর ভালো লাগত না। বললেন, ’আমি সায়েন্সে পড়তাম। জেনারেল ম্যাথ ও হায়ার ম্যাথে বরাবরই আমি ৯৫–এর ওপরে নম্বর পেতাম। অন্য বিষয়ে খুব একটা আগ্রহ পেতাম না।’ এসএসসির পর হঠাৎ চলচ্চিত্রের সুযোগ পেয়ে গেলে তাই কিছুটা খুশিও হন
স্কুলের গণ্ডি পেরিয়েই জীবনের প্রথম সিনেমায় কাজ শুরু করেন শাবনাজ। তারকা হতে খুব বেশি সময় লাগেনি। প্রথম ছবি ’চাঁদনী’ তাঁকে চলচ্চিত্রের ব্যস্ত তারকা বানিয়ে দেয়। প্রথম ছবিতে সম্মানী পেয়েছিলেন ৫০ হাজার টাকা। জনপ্রিয়তার কারণে দ্বিতীয় ছবিতেই সম্মানী বাড়িয়ে দেন ৬ গুণ। এদিকে প্রথম ছবির জনপ্রিয়তায় পরের বছরের পুরো সময়টা বুকিং করে নেন প্রযোজক-পরিচালকেরা।
নব্বইয়ের দশকের আলোচিত সিনেমা ’কেয়ামত থেকে কেয়ামত’–এও অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন শাবনাজ ও নাঈম। পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান সম্মানীও দিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু পরে ছবিটিতে আর তাঁদের কাজ করা হয়নি। এরপর ছবিটির মধ্য দিয়ে সালমান শাহ ও মৌসুমীর মতো দুজন নায়ক-নায়িকাকে পায় বাংলাদেশ।
একটানা ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন শাবনাজ। ’ঘরে ঘরে যুদ্ধ’ ছিল টানা কাজ করার সময়কার সর্বশেষ ছবি। এরপর আর কোনো কাজ করেননি। সংসারে নিজেকে মনোযোগী করেছেন। ১৯৯৯ সালে এসে একসময়ের জনপ্রিয় এই নায়িকার অভিষেক ঘটে টেলিভিশন নাটকে। প্রথম নাটক ’আকাস কুসুম’। এরপর আরও কয়েকটি নাটকে অভিনয় করা হয় তাঁর। ২০০৫ সালে দীর্ঘ বিরতির পর আবার চলচ্চিত্রে অভিনয়ের অনুরোধ আসে শাবনাজের কাছে। বরেণ্য অভিনয়শিল্পী এ টি এম শামসুজ্জামানের অনুরোধ উপেক্ষা করতে না পেরে আজিজুর রহমানের ’ডাক্তার বাড়ি’ ছবিতে অভিনয় করেন। এরপর আর ছোট পর্দা আর বড় পর্দা কোথাও দেখা যায়নি তাঁকে। এসব নিয়ে কোনো আক্ষেপও নেই। পেছন ফিরে তাকাতেও চান না।
উল্লেখ্য, এই জনপ্রিয় অভিনেত্রী ১৯৯১ সালে অভিনয় শুরু করেন। এরপর ১৯৯৬ সাল প্রর্যন্ত একটানা ২৬টি ছবিতে অভিনয় করেছেন। তার অভিনীত ছবি গুলো দর্শকদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। তবে এই অভিনেত্রী যে সকল ছবিতে অভিনয় করেছেন তার বেশিভাগ ছবিই ছিল প্রেমের গল্পের। কিন্তু এই অভিনেত্রী মনে মনে সব সময় বৈচিত্র্যময় গল্পের ছবি খুঁজতেন। তবে কোনো পরিচালক তার মনের কথা বুঝতে পারেনি। আর এ জন্য নিজেকে ধিরে ধিরে অভিনয় থেকে সরিয়ে এনেছেন। তিনি বলেন, সব সময় প্রেমের গল্প এ কারণে একঘেয়ে লেগেছে। তিনি আরও বলেন, আমি অভিনয়শিল্পী হতে চেয়েছি নায়িকা নয়। এ জন্য সব সময় ভিন্ন ধরনের গল্প খুঁজছিলাম। কিন্তু তা আমি পাইনি।